ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের [ইউডা] চারুকলা বিভাগ

05 Jan 2021, 02:40 PM ক্যাম্পাস শেয়ার:
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের [ইউডা] চারুকলা বিভাগ

বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ [ইউডা] বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ। ইউডা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের খুটিনাটি সকল বিষয় নিয়ে থাকছে এবারের ক্যাম্পাস আয়োজন। বিস্তারিত লিখেছেন সোহান আহামেদ...


ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ [ইউডা] বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। প্রাথমিকভাবে যে-সকল শিক্ষার্থী চারুকলা থেকে অনার্স পাশ করে মাস্টার্স করতে পারেনি তাদের কথা মাথায় রেখে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগের তিনটি বিশেষ্যত্ব ছিল প্রিন্ট-মেকিং, পেইন্টিং, গ্রাফিকস ডিজাইন। তিনটি বিষয়ের জন্য তিনজন হেড ছিলেন এবং একজন ছিলেন কো-অর্ডিনেটর। সেই সময় চেয়ারম্যানের পরিবর্তে ছিল কো-অর্ডিনেটর এবং কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক শাহজাহান আহমেদ। তিনিও প্রথম শিক্ষক এই বিভাগের। বিভাগটি শুরু হয় ২৬ জন শিক্ষার্থী ও তিনজন শিক্ষক নিয়ে। বর্তমানে এই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০০ জন এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৩ জন ফুলটাইম ও ৪ জন খÐকালীন। বিভাগীয় চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শুরু করেছিলাম মাস্টার্স প্রোগ্রাম দিয়ে। কারণ তখন বাংলাদেশে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন- রাজশাহী, খুলনা ইত্যাদিতে অনার্স করানো হলেও সেখানে মাস্টার্স করানো হতো না। তাদের মাস্টার্স করতে আসতে হতো ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স বন্ধ করে দেয়। তখন মাস্টার্স করার কোনো সুযোগ ছিল না। মাস্টার্স করতে ভারত বা অন্য দেশে যেতে হতো কিংবা মাস্টার্স করাই হতো না। তাই আমরা প্রথম শুরু করি মাস্টার্স প্রোগ্রাম দিয়ে। এখানে যেকোনো সালে চারুকলায় অনার্স পাশ করে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। বিভাগে একইসাথে অনার্স কোর্স চালু ছিল তবে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার কারণে অনার্স কোর্সটি পরে সেমিস্টার থেকে চালু করা হয়, মানে ২০০৩ সালের জানুয়ারির সাথে।


ভর্তির কার্যক্রম ও যোগ্যতা

উচ্চ মাধ্যমিকে যেকোনো বিভাগ থেকে পাশ করে এই বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে। ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের ‘এ লেভেল’ কমপ্লিট করে আসতে হবে। এরা আর্ট কলেজ থেকে পি ডিগ্রি করে এসে এই বিভাগে অনার্সে ভর্তি হতে পারবে। তবে এখানে ভর্তি হতে হলে আর্ট করার হাত ভালো থাকতে হবে। বিভাগে একটি ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয় আর্টের ওপর। বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ভর্তি হতে এলে তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং ইউনিভার্সিটির নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.৫০ জিপিএ থাকতে হবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে। বিশেষ কোনো বিষয়ের ভালো রেজাল্টের প্রয়োজন নেই, শুধু মোটামুটি আর্ট করতে পারলে তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। চার মাস পর পর ভর্তি নেওয়া হয়।


উল্লেখযোগ্য কোর্স

এই বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। রেস্টোরেশন, গ্যালারি ম্যানেজমেন্ট, ইন্টেরিওর ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন, সেল্ফ ম্যানেজমেন্ট অব আর্টিস্টসহ আরো অনেক বিষয়ে পড়ানো হয় যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। 


সুযোগ সুবিধা

মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা মাথায় রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিকাশ বলেন, চারুকলা বিষয়টির ফি যেন কম হয় তা আমি চেয়েছি। কারণ এখানে পড়তে আসবে পল্লীগ্রাম থেকে আমাদের মতো মানুষ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল সুবিধা রয়েছে, সেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ৩০০০। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি পড়ানো হয়। দরিদ্র হলে তাকে ছাড় দেওয়া হয়। আমাদের বেতন ৪০০০ টাকা তবে পরিবারের আয়ের ওপর নির্ভর করে বেতন কত হবে। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু। যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ভর্তি হয় তাদের জন্য ৫০% ছাড় দেওয়া হয়।


শিক্ষা সফর

অবজারভেশন অব নেচার স্টাডিজ একটি কোর্স রয়েছে বিভাগে। এই কোর্সের জন্য স্টুডেন্টদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা সাতদিন থাকে, স্টাডি করে  এবং আর্ট করে। এছাড়া প্রতিবছরে বিভাগ থেকে শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়ে থাকে। 


অন্যান্য সুবিধা

কম্পিউটার ল্যাব, ২০টি পেইন্টিং স্টুডিও, সেমিনার রুম থিওরি ক্লাশের জন্য রয়েছে।


লাইব্রেরি সুবিধা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার লাইব্রেরি রয়েছে। 


সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অংশগ্রহণ

বিভাগীয় চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের চারুকলা ক্যাম্পাসটি ধানমন্ডি লেকের পাশে তাই আমাদের সকল উৎসব পালন করা হয়। আমরা ২০০৩ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে থাকি। আমাদের কোনো স্পন্সর নেই। এছাড়া ২৫ মার্চ আমরা পালন করি ২০০৩ সাল থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। ভেন্যু হিসেবে এটা আমরাই শুরু করেছি। ২৫ মার্চ সূর্য অস্ত থেকে ২৬ মার্চ সূর্যোদয় পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ছবি আঁকি। এছাড়া অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাÐেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে। 

ছবি : জাকির হোসেন ও সংগ্রহ