শেখার কোনো শেষ নেই -ইসরাত আমীন

13 Dec 2022, 12:54 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
শেখার কোনো শেষ নেই  -ইসরাত আমীন

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন চ্যানেল ২৪-এর সংবাদ উপস্থাপক ইসরাত আমীন তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপককে নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের আয়োজনে... 


 চ্যানেল ২৪-এর সংবাদ উপস্থাপক ইসরাত আমীন একযুগেরও বেশি সময় ধরে সংবাদ উপস্থাপনা পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। তিনি ২০০৯-এ প্রথম যমুনা টেলিভিশনে শিক্ষানবিস হিসেবে যোগদান করেন। যমুনা টেলিভিশনে কাজ করেন ২০১১ পর্যন্ত। এরপর যোগ দেন ৭১ টিভিতে। সেখানেও ২০১৪ পর্যন্ত  কাজ করেন। ৭১ টিভি থেকে ২০১৪-এর মার্চ মাসে চ্যানেলে ২৪-এ যোগদান করেন। বর্তমানে চ্যানেল ২৪-এ কর্মরত। এর বাইরে একটি চ্যানেলে প্ল্যানিং কমিশনের কাজ করছেন। 


সংবাদ উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, ‘সংবাদ উপস্থাপনায় আসব এমন কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছি। ওখানে পড়াশোনার সময় দেখলাম আমার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন চ্যানেলে কাজ করছেন, তখন ভাবলাম আমিও চেষ্টা করতে পারি। এখানে শেখার সুযোগ আছে। তারপর আমি সংবাদ মাধ্যমে কাজ শুরু করি। বিশেষ করে একজন স¤প্রচার সাংবাদিক হিসেবে আমি সংবাদ উপস্থাপনায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। এভাবেই আমার সংবাদ উপস্থাপনায় আসা। আমি মনে করি, একজন স¤প্রচার সাংবাদিক হিসেবে এখানে আমার ক্যারিয়ার গড়া সহজ হবে। এটা চিন্তা করেই হয়ত সংবাদ উপস্থাপনায় এসেছি। আমি এখনো শিখছি। শেখার কোনো শেষ নেই। আগেই বলেছি, আমি ছেলেবেলা থেকে সংবাদ উপস্থাপক হতে চাইনি। ছেলেবেলায় আমার ইচ্ছে ছিল পাইলট হব। কারণ, একজন মানুষ কীভাবে পাখির মতো আকাশে উড়ে যায় সে বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল।’ 


পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘পরিবারের সমর্থন, সহযোগিতা ছাড়া সংবাদ উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব নয়। পরিবারের সমর্থন খুবই প্রয়োজন। কারণ, আপনি যদি পরিবারের সমর্থন না পান তাহলে আপনি এই ক্যারিয়ারকে খুব বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার কর্মজীবন বজায় রাখতে সক্ষম হবেন না। আমার ক্ষেত্রে, আমার স্বামী এবং আমার মা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। মা না থাকলে আমি আমার ছোটো সন্তানকে রেখে কাজে যেতে পারতাম না। ছেলেবেলায় মা আমাকে অনেক সমর্থন করেছেন। বিয়ের পর আমার স্বামীও আমাকে অনেক সমর্থন, সহযোগিতা করছেন। এটা না করলে দিনরাত সংবাদ পরিবেশন করা আমার পক্ষে সহজ হতো না। আমার ক্যারিয়ারে আমাকে এত সমর্থন করার জন্য এই দু’জনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ 


প্রথমবার নিউজ প্রেজেন্টেশনে অনেক সমস্যা হয়েছিল ইসরাত আমীনের, কারণ তার ক্যামেরা ফোবিয়া ছিল। তিনি সবসময় ভাবতেন, এই ক্যারিয়ারে কখনই ভালো করতে পারবেন না। ক্যামেরার দিকে তাকালেই তার মনে হয়েছে এখন বুঝি আর পড়তে পারবেন না। এরপর ভালো করার জন্য তিনি অনেক অনুশীলন করেছেন, দুর্বলতা দূর করার জন্য প্রচুর বই পড়েছেন, পাÐলিপি লিখেছেন। এভাবেই আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করছেন ইসরাত আমীন। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা মনে পড়লে আজও খুব হাসি পায় তার। 


নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা এই পেশায় আসতে চান, সংবাদ উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে- সবার আগে নিজেকে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে গড়ে তুলুন। স্টেশন কীভাবে পরিচালিত হয়, কীভাবে প্রোডাকশন কাজ করে, সবকিছুর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। নিজেকে একজন হিসেবে গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে ৬ মাস থেকে ১ বছরের একটা স্টেশনে কাজ শিখুন। তারপর সংবাদ উপস্থাপনায় আসুন। যদি ৬ মাস থেকে ১ বছর আপনি একটা চ্যানেলে কাজ করেন, চ্যানেলের সঙ্গে সবসময় সম্পৃক্ত থাকেন, কোনো পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকলে খবর সম্পর্কে জানতে পারবেন, আপনার একটা ধারণা তৈরি হবে এবং নিজের উপর আপনার একটা নিয়ন্ত্রণ তৈরি হবে। তখন অনায়াসেই  আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।’ 


সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, জানতে চাইলে বলেন, ‘সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে- আমরা যারা এই পেশায় আছি সবাই মিলে এই পেশাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেন সংবাদ উপস্থাপক নিজেই একটা ক্যারিয়ার হয়। এটাকে যেন পার্টটাইম ক্যারিয়ার ভাবার সুযোগ না থাকে। সর্বোপরি সংবাদ উপস্থাপনা পেশাকে একটি ভালো ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করব এবং কাজ করব।’ 


ইসরাত আমীন অবসর খুব একটা পান না। পেলে গান শোনেন, আগে খুব বই পড়তেন এখন কম পড়েন। সময় পেলে পাহাড়ে ঘুরতে ভালো লাগে, প্রিয় ঋতু হেমন্ত, প্রিয় খাবার বাঙালি সব খাবার, পছন্দের রং হালকা বেগুনি।  


 


সাক্ষাৎকার : শহিদুল ইসলাম এমেল