তোমাকে ভালোবাসি কুইন

09 Jan 2023, 02:51 PM শিশুভুবন শেয়ার:
তোমাকে ভালোবাসি কুইন

রাইদা গালিবা, মা আদর করে ডাকতেন কুইন। কবি ও কথাসাহিত্যিক কানিজ পারিজাতের মতোই লেখালেখি করতে ভালোবাসতেন বারো বছরের রাইদা। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী রাইদা গালিবা’র তিনটি গল্পগ্রন্থ ক্ষুদে পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছে। গ্রন্থ তিনটির নাম হলো ‘এক যে ছিল মুচি’, ‘পিটুর জাদু জুতা’ এবং ‘ইমা ও দৈত্য’ ; আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার চতুর্থ বই ‘ভয়ংকর গাছ’ প্রকাশের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ‘প্রকৃত অর্থে গাছটি বীভৎস, ভয়ংকর। এই গাছের কাছে গেলে তার প্রাণসংহার অনিবার্য।’

ছোট্ট রাইদা কি বুঝতে পেরেছিলেন ভয়ংকর কেউ তাঁর প্রাণসংহার করবে ! নইলে এমন একটি গল্প-ভাবনা তাঁর মাথায় এলো কী করে !

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। পয়লা ডিসেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহাকাশের নক্ষত্রম-লীর সদস্য হয়ে গেছেন রাইদা। এর আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে অভিভাবকেরা তাঁকে রাজধানীর একটি প্রথম শ্রেণির বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। রাইদার মা কবি ও কথাসাহিত্যিক কানিজ পারিজাত এবং পরিবারের অন্যরা অভিযোগ করেন যে, চিকিৎসকের অবহেলার কারণেই মেধাবী, প্রতিভাধর এই শিশু-সাহিত্যিক মৃত্যুর হিমশীতল গহ্বরে চলে যেতে বাধ্য হলেন বড়ো অকালে।

‘চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু’- এমন অভিযোগ প্রায়ই তো ওঠে ; অমূলক নয়। চিকিৎসা মহৎ এক পেশা। আর্তমানবের সেবা করা চিকিৎসকের ধর্ম। চিকিৎসকজীবন শুরু করার সময় মানুষের সেবা করবেন বলে তাঁরা শপথ গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে প্রবেশের পর তাঁদের টাকার নেশায় পেয়ে বসে। সমগ্র বোধ-বিবেক-কে পাশ কাটিয়ে তারা ছুটতে থাকেন টাকার পেছনে। কত টাকা চাই তাদের ? হাসপাতালে যাদের কাজ, তারা তো প্রতিদিন দেখেন কত লোক পরপারে পাড়ি দেন প্রতিমুহূর্তে, কিন্তু চির বিদায়ের সময় নিজের অবয়ব এবং কাফনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে যায় না। ধন-সম্পদ, বিষয়-আশয় সবই রেখে যেতে হয়। তাছাড়া যে রোগী তাকে বিশ্বাস করে, নির্ভর করে তার শরণাপন্ন হয়েছেন সেই রোগীর প্রতি কি কোনো রকমের দায়-দায়িত্ব নেই তাঁর ! রোগী বাঁচল কি মরল তার তাতে কিছুই কি যায় আসে না! পকেটে টাকা ঢুকলেই হলো ? বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের যোগসাজশে রোগীকে কোনো একপর্যায়ে আইসিইউতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আইসিইউ থেকে বেশিরভাগ রোগীই গোরস্তানে যেতে বাধ্য হয়। তাতে কী, হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে তো লাখ লাখ টাকা ডিপোজিট হয়। হায় রে মানবতা, হায় রে মানবসেবার শপথ ! ধিক ! শত ধিক !

ক্ষুদে সাহিত্যিক রাইদাকেও তো আইসিইউতে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি বেরিয়েছিলেন। তবে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে সোজা চলে গিয়েছিলেন একেবারে গোরস্তানে।

না, রাইদা মরে যাননি, রাইদার মতো মায়াবী, মেধাবী ও প্রতিভার অধিকারীরা কখনো মরে না। তাঁরা বেঁচে থাকেন নিজের সৃষ্টিশীলতার মাঝে, তাঁরা জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাইদাও প্রতিবাদ করেছেন - প্রতিবাদ করেছেন আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার বিরুদ্ধে, আমাদের স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে, আমাদের দুর্দমনীয় লোভী হীন মানসিকতার বিরুদ্ধে, আমাদের সীমাহীন অসচেতনতার বিরুদ্ধে।

রাইদা গালিবা কুইন, তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো। মনে রেখো, আমরা তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি।

শ্যামল কায়া