একজন সংবাদ উপস্থাপককে অবশ্যই রুচিশীল হতে হবে -সাদিয়া আফরিন

11 Apr 2023, 03:21 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
একজন সংবাদ উপস্থাপককে অবশ্যই রুচিশীল হতে হবে  -সাদিয়া আফরিন

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক সাদিয়া আফরিন তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপককে নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের ঈদ আয়োজনে...



সাদিয়া আফরিন ছেলেবেলা থেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যেকোনো অনুষ্ঠানেই মাইক্রোফোনটা তার হাতেই থাকত। তখন থেকেই উপস্থাপনা বিষয়টা তাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মা-বাবা দু’জনেই তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। নিজের ইচ্ছাও ছিল খুব প্রবল। সেই ইচ্ছা থেকেই মূলত সংবাদ উপস্থাপনায় চলে আসেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া থেকে সংবাদ উপস্থাপনার ওপর একটা কোর্স করেন। সেখান থেকেই প্রথমে সিভি জমা দেওয়া হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে। তারপর বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে তাকে ফোন করে ডাকা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক থেকে দেড় বছরের লম্বা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয়টা পরীক্ষা দিয়ে তিনি বিটিভিতে সিলেক্ট হয়েছেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রæয়ারিতে তিনি সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে বিটিভিতে যোগদান করেন।

সাদিয়া আফরিনের প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা সবার থেকে একটু ভিন্ন। প্রথমদিন জ্যামের কারণে দেরি হয়ে যায় পৌঁছাতে। নিয়ম অনুযায়ী সংবাদ পড়ার দুই ঘণ্টা আগে মেকআপ রুমে ঢুকতে হয়। তার সিডিউল ছিল বিকেল পাঁচটার নিউজ পড়ার। তাই দুই ঘণ্টা আগে তিনটায় মেকআপ রুমে থাকার কথা ছিল তার কিন্তু প্রথম দিনই সেই সময়টা মেইনটেইন করতে পারেননি। তিনি মেকআপ রুমে ঢোকেন চারটার পরে। যার কারণে একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ওখানকার মেকআপ আর্টিস্টরা খুবই কো-অপারেটিভ ছিল। তারা খুব দ্রæত আমাকে রেডি করে দিয়েছিলেন। যার কারণে আমি প্রথম দিনের নিউজটা পড়তে পেরেছিলাম। প্রথমদিনের নিউজ পড়ার সময় আমাকে সবাই ভালো ফিডব্যাক দিয়েছে। সেদিন আমি যে প্রথম নিউজ পড়লাম এটা কেউ বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছে আমি অনেকদিন যাবত নিউজ পড়ছি।”

একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য যেসব গুণ থাকা দরকার তার সবগুলোই আছে সাদিয়া আফরিনের। এটা শুধু তার বেলায় নয়, যারা সংবাদ উপস্থাপক হতে চায় তাদের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, সবার আগে স্পষ্ট উচ্চারণ, এটা খুবই ভাইটাল একটা বিষয় যেটা আমার কাছে মনে হয়। আমি ২০১০-এ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া থেকে কোর্স করার পর বিটিভিতে সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করি। বিটিভিতে সংবাদ পাঠের পাশাপাশি জুন ২০১১ থেকে আবার ওই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। সেখানে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি। ওখানেও আমি একটি কথাই বলি, “সবার আগে শুদ্ধ এবং স্পষ্ট উচ্চারণ, তারপর কোথায় পজ দিতে হবে সে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। পজিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পজিংয়ের ব্যাপারে অনেকেরই অনীহা দেখা যায়। তারপর আমি নিউজ পড়ছি বলে যে অন্য নিউজগুলো দেখবো না, এরকম নয়। সব নিউজ দেখে আপডেটেড থাকতে হবে। সারাদিন দেশ-বিদেশে কী ঘটছে সেই নিউজগুলো দেখে তারপর সংবাদ পড়তে যেতে হবে। সর্বোপরি একজন সংবাদ উপস্থাপককে অবশ্যই রুচিশীল হতে হবে। কারণ, আপনাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে। আপনার ড্রেসআপ, গেটআপ এমন হওয়া উচিত যেন সবাই আপনাকে আইকন মনে করে। নিউজ প্রেজেন্টারদের খুব বেশি মেকআপ, ভারি অলংকার, এসব পরা উচিত নয়।”

সাদিয়া আফরিন জুলাই ২০০৯ থেকে জুন ২০১১ পর্যন্ত ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের লেকচারার ছিলেন। জুন ২০১১ থেকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে [বিআইজেইএম] প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়মিত কাস নিচ্ছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলো সঞ্চালনা করছেন। তার মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, স্বাধীনতাদিবস, মেদিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাদিবস, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন উল্লেখযোগ্য।
 লেখা : শহিদুল ইসলাম এমেল