আনন্দভুবন যাদের, যারা আনন্দভুবনের

14 May 2023, 04:02 PM অন্যান্য শেয়ার:
আনন্দভুবন যাদের, যারা আনন্দভুবনের

২৮ বছরে আনন্দভুবনের কাজ করেছেন অনেক সংবাদকর্মী। তাঁদের মধ্যে অনেকে বড়ো বড়ো দায়িত্ব নিয়ে অন্যত্র কাজ করছেন। কিন্তু ভুলে যাননি আনন্দভুবনকে। এখনও যোগাযোগ রাখেন নিয়মিত। তাঁদের কয়েক জনের শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠকের জন্য...


আনন্দভুবন শতায়ু হোক

শুচি সৈয়দ

সহকারী সম্পাদক, দৈনিক যুগান্তর

পাক্ষিক ‘আনন্দভুবন’ দেশের বিনোদন ম্যাগাজিনের ধারণাকে এক অন্যমাত্রায় উত্তীর্ণ করেছিল। একটি পত্রিকা কতটা নান্দনিক, কতটা সুন্দর ও রুচিসম্পন্ন হতে পারে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে ‘আনন্দভুবন’ ছিল তার উজ্জ্বল ও অনন্য উদাহরণ। একদল প্রাণবন্ত তরুণের তারুণ্যের তুমুল প্রাণস্পন্দনে ভরে থাকত এ পত্রিকার প্রতিটি পৃষ্ঠা। এমনই অনন্য একটি পত্রিকায় আমিও কাজ করেছি একসময়। সেই সময়টা ছিল সত্যিকারের আনন্দের। ‘কাজ’ যখন ‘আনন্দে’র সমার্থক হয়ে ওঠে তখন তা পায় সার্থকতা। ‘আনন্দভুবন’র পৃষ্ঠাগুলো সে সার্থকতার স্বাক্ষর বহন করে। আড্ডা, আনন্দ, কাজÑ বাস্তবতার এমন সমন্বয় খুব কমই ঘটে। আমি ‘আনন্দভুবন’র সেই দিনগুলোকে ভী-ষ-ণ মিস করি। এখনো ‘আনন্দভুবন’ তার চরিত্রের সেই ধারাবাহিকতা বহন করে চলেছে। আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষেরা হার্দিক পরিবেশে কাজ করে চলেছেন, এখনো ‘আনন্দভুবনে’ পা রাখলে মনে হয়- এ তো আমার নিজেরই গৃহ, যেখানে প্রাণ খুলে আড্ডায় কীভাবে দ্রুত সময় বয়ে যায়, তার হদিস থাকে না। ‘আনন্দভুবন’ শতায়ু হোক, এ কামনা তাই আমি করতেই পারি নির্দ্বিধায়।


আনন্দভুবন আজ, অন্যরা আগামীকাল

সৈকত সালাহউদ্দিন

সাংবাদিক, উপস্থাপক, আন্তর্জাতিক পরিবেশক

প্রাক্তন নির্বাহী সম্পাদক, আনন্দভুবন

আনন্দভুবন প্রকাশনার জগতে এমন অনেক কিছু করেছে যা অন্যেরা পরে করেছেন। এমনকি এখনো অনেক আলোচনা হয় আনন্দভুবনের কাভার ফটোসেশন নিয়ে। গত শতকের নয়ের দশকে যে বাজেটে আমরা কাভারের সেশন করেছি তা এখন অনেক টিভি শো’র চেয়েও বেশি। সেসময়ের অনেক নতুনের প্রথম প্রচ্ছদ করেছে আনন্দভুবন যারা আজকের বড়ো তারকা যেমন শাকিব খান। আনন্দভুবনে সাংবাদিকতা করে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক, করপোরেট, উপস্থাপক, নির্মাতার সংখ্যা কম নয়। আমি সবসময় আনন্দভুবনের প্রতি কৃতজ্ঞ। নাটক, সিনেমার সঙ্গে বিনোদন পত্রিকায় গান, আবৃত্তি, থিয়েটার, ফ্যাশনকে প্রতিষ্ঠিত করে আনন্দভুবন। সব মিলিয়ে আনন্দভুবন মিডিয়ার আর্কাইভ। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আর্কাইভের যাত্রা করে নতুন প্রজন্মের জন্য তা উন্মুক্ত করুক সে প্রত্যাশা রইলো।


তখন সময় ছিল উড়ার

নজরুল ইসলাম [সৈয়দ]

নাট্যকার

তখন কলেজের বয়স, তখন ওড়ার সময়, পড়ারও। লিখি আগডুম বাগডুম, ছাপে পত্রিকাও। কেনার পয়সা নেই, ‘সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র’ ভরসা। সেখানে দাঁড়িয়ে গিলি ববিতা, বিপাশা। এর মধ্যেই হুট করে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে সুফিয়া ! লোরেন নয়, কাঙালিনি ! আরে ধ্যাৎ এসব কাঙাল ফাঙাল আবার ম্যাগাজিনের কাভারে কেন ? এমন উদ্দাম সাহস কোথায় পেল এরা ? প্রিন্টিং লাইনে শুধু সম্পাদক আর প্রকাশকের নাম, ঠিকানা ধরে এক দুপুরে হাজির হলাম। সেই থেকে, ঠিক সেদিন থেকে আমি আনন্দভুবনের গোলাম। যতটুকু লেখা শিখি সেই উত্তর কৈশোরে, সবটুকু কৃতিত্ব তার, আনন্দভুবনের তরে। গোলাম ফারুক, আদিত্য কবির, অদিতি কবির, অনিন্দ্য কবির, জামিল বিন সিদ্দিক, পল্লব মুহাইমেন, মুম রহমান, জিনাত জাহান তুয়া, সৈকত সালাহউদ্দিন, জয়দেব পলাশ, আনু ভাই, রুবেল। আর ওদিকে আমিনুল ভাই, আজাদ ভাই, নজরুল ভাই। আর এদিকে ফিরোজ সারোয়ার আর ইকবাল খোরশেদ ভাই, ইহাদের মাঝে আমি পুনঃ পুনরায় ফিরিয়া যাইবার চাই... সকলের তরে মোর কৃতজ্ঞতাভরা সেলাম জানাই।


জীবনের আঁতুড়ঘর

এম এস রানা

সিনিয়র সাংবাদিক [বিভাগীয় প্রধান, বিনোদন]

আজকের পত্রিকা

যেকোনো সৃষ্টির শুরুটা হয় আনন্দের, দ্বিতীয় ধাপটা কষ্টের। আনন্দভুবন পত্রিকার দ্বিতীয় ধাপের শুরুতেই সঙ্গী হয়েছি আমি। আমার সাংবাদিকতা জীবনের আঁতুড়ঘর আনন্দভুবন। কত কাঠখড় পুড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল পত্রিকাটি। ততদিনে আমার জায়গা বদলের সময় এল। সমকাল হয়ে কালেরকণ্ঠ, এরপর বিটিভি হয়ে এখন আজকের পত্রিকায়। খবর পেলাম আমার প্রিয় আনন্দভুবন আজ ২৮ ছুঁয়েছে। অদ্ভুত এক আনন্দে ভরে গেল মনটা। কত কত পত্রিকা এল, আবার ঝরেও গেল। কত মন্দ সময় এল, আবার আলোর ভোরও এল। আনন্দভুবন আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আধুনিক পাঠকের বিনোদন আর জীবনশৈলীতে এখন আরো সমৃদ্ধ আর আধুনিক হয়ে ওঠা আনন্দভুবন আমার গর্ব, আমার অহংকার। নজরকাড়া প্রচ্ছদ আর দৃষ্টিনন্দন পেজ মেকআপ সেই সঙ্গে সমসাময়িক লেখনী পত্রিকাটির অনন্য বৈশিষ্ট্য। ভালো লাগছে বিস্তৃত অনলাইন ভার্সন। জন্মদিনে লেখক, পাঠকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন, ভালোবাসা।


চেনা-জানা হারিয়ে যাওয়া গন্ধেরা

ইভা খান

শিক্ষক, স্কলাস্টিকা

গন্ধের অসীম এক ক্ষমতা আছে। হঠাৎ টুক করে নাকে এসে নাসারন্ধ্র ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌঁছে আমাদরে স্মৃতিকে উস্কে দেয়। বিশেষ করে সেই সব স্মৃতি যার সঙ্গে ওই গন্ধটার সম্পর্ক থাকে। বৃষ্টির পরে মাটির সোঁদা গন্ধে যেমন অনেকের মন হারিয়ে যায় কোন সুদূরে, তার ফেলে আসা শৈশবের কোনো স্মৃতিতে। কিন্তু আমার ব্যাপারটা ভিন্ন। আমার মস্তিষ্কে একটা তীব্র কিন্তু মিষ্টি গন্ধের স্মৃতি আছে, কিন্তু গন্ধটা আমি আর খুঁজে পাই না। তাই ওই গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকা স্মৃতিগুলোও আর হুড়মুড় করে মনে আসে না আজকাল। আমার তরুণকালের হারিয়ে যাওয়া সেইসব স্মৃতি! আনন্দভুবনে ঢুকলেই সেই গন্ধটা নাকে এসে লাগত। কী এক অপার শক্তি ছিল তার ! চনমনে, টগবগে, উদ্দীপ্ত করার মতো একটা গন্ধ, কারওয়ান বাজারে আনন্দভুবনের অফিসময় ঘুরপাক খেত। অনেক ভেবেছি তখন, মিষ্টি এই গন্ধটা কোত্থেকে আসে ? পরে মনে হয়েছে ভোঁগ, এ’লে, কসমোপলিটান এই রকম বিদেশি ম্যাগাজিনগুলোর ভেতরে দেওয়া নামি-দামি সব ব্র্যান্ডের পারফিউমের স্ট্রিপ থেকে আসতো হয়ত। সেই সুগন্ধই নিউজপ্রিন্ট আর অফসেট কাগজের গন্ধের সঙ্গে মিশে এরকম মোহাচ্ছন্ন এক সুগন্ধ তৈরি করত। সেই সুগন্ধকে এখন খুঁজে ফিরি। আরেকবার যদি নাকে এসে লাগত ! তাহলে সজাগ হয়ে যেতে পারত আমার পুরনো চনমনে, টগবগে সময়ের সেই দিনগুলোর কথাÑ ফিরে যেতে পারতাম খানিক সময়ের জন্য হলেও সেই সময়ে। দেখে নিতে পারতামÑ কেমন করে পেতাম তুড়ি মেরে সব উড়িয়ে দেবার মতো স্পৃহা, কোন প্রেরণায় বুনে যেতে থাকতাম স্বপ্নজাল অবিরত! আকাশে মেঘের তোলপাড় দেখেও কী করে পেতাম তক্ষুনি বাইরে বেরিয়ে পড়ার সাহস !

সেই সুবাসটা এখন হয়ত আর নেই। হারিয়ে গেছে আরো অনেক কিছুর মতো, আমারই মতো। কাগজ হয়ে গেছে এখন ডিজিটাল, অনলাইন। আনন্দভুবনও হয়েছে অনলাইনÑ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে। খুব ভালো লাগে যখন দেখি সময়ে সময়ে রুচি-চাহিদার সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে হয়ে কী রকম দোর্দাÐ প্রতাপে এগিয়ে চলেছে আমার প্রিয় কাগজ, আমার অনেক স্মৃতির ভান্ডার- ‘আনন্দভুবন’। ২৮তম জন্মদিনে আনন্দভুবনের সংশ্লিষ্ট সবাই ও সকল পাঠককে জানাই অগাধ ভালোবাসা। আনন্দভুবনের পথচলা আরো দীর্ঘতর হোক- জন্মদিনে এই শুভকামনা।


আনন্দভুবনে একটি উৎসরমুখর পরিবেশে থেকেছি

মাসুদ সেজান

লেখক, নাট্যকার ও নির্মাতা

আনন্দভুবন আমার সাংবাদিকতার শুরু বলা যায়। সেই হিসেবে আনন্দভুবনকে আমি সবসময় অনুভব করি। আমি যে সময়টায় কাজ করতাম সেসময়টা স্বর্গ সময় ছিল আমার জীবনের জন্য। আমি যাদের পেয়েছি, যারা আমার কলিগ ছিল আমরা সবাই খুব মজা করে সময় পার করেছি। আনন্দভুবনে একটা উৎসবমুখর পরিবেশে থেকেছি সবসময়। মনে হয়নি যে আমি চাকরি করছি। ওই ব্যাপারগুলো খুব মিস করি। তখন পাক্ষিক বিনোদন ম্যাগাজিন আরো ছিল তবে আনন্দভুবন দ্রুত একটা লিডিং পয়েন্টে চলে এসেছিল। এবং এখনো যে আনন্দভুবন ২৮ বছর ধরে বাজারে আছে সেটা নিঃসন্দেহে একটা আনন্দের ব্যাপার। মানে এখনো যে আনন্দভুবন নিয়মিত বের হচ্ছে সেটা জেনে খুশি হলাম। অনেক পত্রিকা তো হারিয়ে গেছে। আমাদের মাধ্যমগুলো দ্রুত পরিবর্তনের কারণে পাক্ষিক পত্রিকাগুলোর আগের মতো চাহিদা নেই। কিন্তু আনন্দভুবন তার স্বকীয়তা নিয়ে যতটুকু পেরেছে, এগিয়ে এসেছে বা এখনো আছে এটাই একটা বড়ো সার্থকতা। এই কারণে আনন্দভুবনের প্রতি আমার সবসময় ভালোবাসা থাকবে। শুভকামনা থাকবে।


আনন্দভুবনে আনন্দে ছিলাম

প্রশান্ত অধিকারী

যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, এনটিভি

আনন্দভুবনে আমার প্রবেশ ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, দৈনিক আজকের কাগজ বন্ধ হওয়ার একসপ্তাহ পরেই। আনন্দভুবন সম্পাদক ইকবাল খোরশেদ আগেই একদিন বলেছিলেন, আমি আনন্দভুবনে কাজ করব কি না। ঠিক তার কয়েক মাস পর দৈনিক আজকের কাগজ বন্ধ হলে ইকবাল ভাইকে এসে বললাম, উনি বললেন- ঠিক আছে, তুমি জয়েন কর। জয়েন করলাম। সেই শুরু।

টানা ১০ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে আনন্দভুবন ছাড়লাম। এই ১০ বছরে বেশ আনন্দেই ছিলাম। অনেক শিখেছি, অনেক লিখেছি। অনেক লেখার সুযোগ পেয়েছি। ওই ১০ বছর আমার দ্বিতীয় পরিবার ছিল আনন্দভুবন। এখনো মনে করি আনন্দভুবনকে। আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছি আনন্দভুবনে।

একটি প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে কীভাবে একটি পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়, আনন্দভুবন তার অনন্য উদাহরণ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাই আনন্দভুবন ও আনন্দভুবন পরিবারের সবার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, আনন্দভুবনের ১০ বছরে আনন্দেই ছিলাম। এভাবেই আরো যুগ-যুগ আনন্দভুবন আনন্দময় সময় পার করুক। দীর্ঘজীবী হোক আমার প্রিয় আনন্দভুবন।


আনন্দভুবনের কাওরান বাজারের অফিস ভীষণ মিস করি

শাহ আলম সাজু

স্টাফ রিপোর্টার, ডেইলি স্টার

ফটোগ্রাফার পিপুল ভাই একদিন পল্টনে দেখা হওয়ামাত্র বললেন, কোথায় কাজ করছিস ? সবকিছু জানার পর তিনি বললেন, তোর ব্যাপারে আনন্দভুবনের সম্পাদক ইকবাল ভাইর সঙ্গে কথা বলব। কয়েকদিন পর পিপুল ভাই ফোন করে বললেন, সাজু, তুই ইকবাল ভাইর সঙ্গে দেখা কর। ব্যস! গল্পের শুরু এভাবেই। তার আগে আমি জেনেছি এবং অনেকেই জানতেন পাক্ষিক আনন্দভুবন এদেশের নামি একটি ম্যাগাজিন। তার আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে। শিল্প-সাহিত্যে তার আলাদা কদর আছে। তার নাম সুনাম সর্বত্র।

যা-ই হোক, আমি খুবই উত্তেজিত এজন্য যে, যদি আনন্দভুবনে চাকরিটা হয়ে যায় ! কেননা, সেই সময়ে আমি আরেকটি ম্যাগাজিনে সাংবাদিকতা করছি, কিন্তু নিয়মিত বেতন পাই না, মাস শেষ হয়ে গেলেও বেতন দেয় না।

একটু বলে নিই, ফটোগ্রাফার পিপুল ভাইয়ের সঙ্গে সেই অনিয়মিত বেতন দেওয়া পত্রিকায় একসঙ্গে সাংবাদিকতা করেছি। তার মোটরসাইকেলে খ্যাতিমান অভিনেতা আলী যাকের, কাদেরী কিবরিয়াসহ অনেক বিখ্যাত মানুষের ইন্টারভিউ করতে গেছি। আমাকে স্নেহ করেন বলেই আনন্দভুবন সম্পাদক ইকবাল ভাইর কাছে সুপারিশ করেছেন।

একদিন কাওরান বাজারে আনন্দভুবন ম্যাগাজিনের অফিসে গিয়ে দেখা করি সম্পাদক সাহেবের সঙ্গে। প্রথম পরিচয়ের দিন তিনি আমাকে একটি অ্যাসাইনমেন্ট দেন। সামনে ছিল নারীদিবস, নারীদিবস নিয়ে নামকরা ক’জন নারী অভিনেত্রী ও নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে একটি ফিচার দিতে হবে। মহাআনন্দ নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করে দেবÑ এই কথা বলে বের হয়ে আসি।

কিন্তু মহাআনন্দ মহাটেনশনে পরিণত হয় যখন অ্যাসাইনমেন্টের জন্য বিখ্যাত কয়েকজন নারীকে ফোন করতে শুরু করি, কিন্তু তাদের ডেট পাই না। কারণ, তারা তো আমাকে সেভাবে চেনেন না। কিন্তু দিনের পর দিন ফোন করতেই থাকি। মনে পড়ে, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সারা যাকের ও নারগিস আক্তার। অনেক কষ্টে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলাম।

প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট সুন্দরভাবে করার পরের মাসে আনন্দভুবনে আমার চাকরি হয়ে যায়। বলছি ১৮ বছর আগের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ করে সেই সময়ে আমি ইউরোপ যাবার নেশায় অন্যরকম অস্থির সময় পার করছি, আর সাংবাকিতা করছি। মাত্র ১৬ মাস সাংবাদিকতা করেছিলাম, কিন্তু পত্রিকাটি আমার অনেক আপন হয়ে যায় অল্প দিনে। পত্রিকার মানুষগুলোও অনেক আপন হয়ে যায় ।

১৬ মাসে অসংখ্য স্মৃতি আমার। ১৬ মাসে আনন্দ বেদনার স্মৃতি জমে আছে আনন্দভুবনে। শুরুতেই কভার স্টোরি করার জন্য মোনালিসাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ধানমন্ডিতে তার ফটোশুট করা হয়েছিল। এমএস রানা ও আমি ছিলাম সেদিন। তানিয়া ও টুটুল ভাইয়ের ফটোশুটের স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে টনি ডায়েস, প্রিয়া ডায়েস ও তাদের একমাত্র ছোট্ট কন্যা অহনাকে নিয়ে কভার স্টোরি হয়েছিল, যা আমি করেছিলাম।

সেই সময়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে একবার আনন্দভুবনের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। শোবিজ জগতের অনেক তারকারা সেদিন এসেছিলেন। খুব আনন্দ করেছিলাম। সেই স্মৃতি ভুলতে পারব না কোনোদিনও। আনন্দভুবন ২৮ বছরে পা দিচ্ছে। শতায়ু হোক। আনন্দভুবনের জন্য আমার ভালোবাসা। কাওরান বাজারের সেই অফিস আজও মিস করি। খুব করে মিস করি।


আনন্দভুবন সাংবাদিকতার আতুরঘর

শুভ জন্মদিন আনন্দভুবন।

হক ফারুক আহমেদ

লেখক ও সাংবাদিক

আমি বলব যে, আনন্দভুবন আসলে সাংবাদিকতার আতুরঘর। আসলে সত্যিকার বলতে যারা বিনোদন এবং সংস্কৃতিবিষয়ক সাংবাদিকতা করে থাকে সেই হিসেবে আমার সাংবাদিকতার শুরুটাও কিন্তু আনন্দভুবনে। এবং আমি এখনো মনে করি আমার সাংবাদিকতার যে শিক্ষা সেটা আসলে আমি আনন্দভুবনেই পেয়েছিলাম। সেখান থেকেই আমার আনন্দভুবনের পরিক্রমায় বিনোদন সাংবাদিকতা এবং সংস্কৃতিবিষয়ক সাংবাদিকতার নানান ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে অনেক ম্যাগাজিন হারিয়ে গেছে। এবং বাংলাদেশে ম্যাগাজিন পড়ার যে একটা সংস্কৃতি ছিল সেটা অনেকটা কমে গেছে। এই অবস্থার মধ্যেও আনন্দভুবন যে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে এবং আনন্দভুবন এখনো তার শিল্পসংস্কৃতিবিষয়ক যে চর্চা লেখালেখির মাধ্যমে অব্যাহত রেখেছে এজন্য আমি আনন্দভুবনকে সাধুবাদ জানাই। আমি চাই, আনন্দভুবনের পথচলা আরো এগিয়ে যাক এবং ম্যাগাজিনের যে পাঠক সেই পাঠক তৈরিতে আনন্দভুবন আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক।


আনন্দভুবনের কাছে আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা

রিয়াদ শিমুল

সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, প্রোগ্রাম

মাছরাঙা টেলিভিশন

নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে বিনোদন ম্যাগাজিনের পাঠকদের চমকিত করে আনন্দভুবন। আমরা যারা বিনোদন দুনিয়ার খবরাখবর জানতে আগ্রহী ছিলাম তাদের কাছে পত্রিকাটি হয়ে ওঠে অনন্য এক সংযোজন। সময়ের তুলনায় আধুনিক এবং অভিনব এই পাক্ষিক খুব দ্রæত মানুষের ড্রইংরুমে জায়গা করে নেয়। প্রতিটি সংখ্যার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। আনন্দভুবন পড়ে জানতাম কারা আজকের এবং আগামীর তারকা। পাঠকের চিঠি বিভাগে নিজের লেখা একটা চিঠি দেখার জন্য কী যে আকুলতা নিয়ে পাতা উল্টাতাম ! সময়ের পরিক্রমায় একদিন কাজ করার সৌভাগ্যও হলো প্রিয় আনন্দভুবন-এ। বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে আমার পেশাজীবনের বড়ো সময়টা এখানেই কেটেছে। পাঠক হিসেবে আমাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে পত্রিকাটি তেমনি সমুন্নত করেছে কর্মী হিসেবেও। তাই আনন্দভুবন-এর কাছে আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা। আনন্দভুবন-এর একজন কর্মী ছিলাম এই পরিচয় আমার জন্য সবসময় আনন্দের। পথচলার ২৮ বছরে পদার্পণের শুভক্ষণে আনন্দভুবন-এর জন্য অনিঃশেষ ভালোবাসা।


আনন্দভুবন আমার শেখার স্কুল

আতিফ আতাউর

সহ-সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

আনন্দভুবন অফিস ছিল আমার কলেজ ঢাকা কলেজের খুব কাছে। এই পত্রিকায় যখন যোগ দিই তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। কলেজের পড়া আর পত্রিকায় লেখা দুটোই সমানতালে চালিয়ে নিতে পেরেছিলাম পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক আলমগীর হোসেন আর সম্পাদক ইকবাল খোরশেদ স্যারের বদান্যতায়। হাতেকলমে এই অফিসে সাংবাদিকতার কলাকৌশল শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখানে পেয়েছিলাম একঝাঁক আন্তরিক আর নিবেদিতপ্রাণ সহকর্মী। এই অফিসে কয়েক বছর কাজ করেছি। ঢাকার অলিগলিতে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছি। সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড়ো গুণ সাহস, তাও পেয়েছি এই অফিস থেকে। শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে বড়ো বড়ো সেলিব্রেটিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া, তারকাদের বাড়ি, প্রডাকশন অফিস, করপোরেট অফিস, শুটিং স্পট থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেলের আলোকোজ্জ্বল অন্দরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে আনন্দভুবন। এই সুযোগ কাজে দিয়েছে পরবর্তীজীবনে। এখনকার অনেক বড়ো বড়ো সাংবাদিকেরা উঠে এসেছেন আনন্দভুবন থেকে। তাদের সঙ্গে পরিচয় ভাগাভাগি হলে খুব ভালো লাগে। প্রাক্তন অফিসের সহকর্মী হিসেবে তারা ভালোবাসায় সিক্ত করেন। এখনো আনন্দভুবনের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে এগিয়ে চলেছি। আমার শেখার স্কুল আনন্দভুবন। আনন্দভুবনের ২৭ বছর পূর্তিতে অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।