ধানের জেলা সুনামগঞ্জ সারাদেশে খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। জেলার ১৩৭টি হাওরে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব উপজেলার কৃষকদের দ্রুত ধান কাটা শেষ করার জন্য মাইকিং করা হয়। তারপর থেকেই কৃষকেরা একযোগে ধান কাটতে শুরু করে। এবার কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই হাওরের কৃষকেরা তাদের সব ধান কেটে ঘরে তোলে। এখন পুরোপুরি ধান কাটা শেষ। এবার কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া ভালোভাবে ধান কেটে ঘরে তোলার কারণে হাওরের মানুষদের ঘরে ঘরে আনন্দের জোয়ার এসেছে। যে বছর তারা ভালোভাবে ধান কেটে ঘরে তোলে, সে বছর তাদের আনন্দের পরিধিও বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটে পুরো বছর। এবার সুনামগঞ্জের কৃষকদের প্রতিটি পরিবারে বোরো ধান ঘরে তোলার সুখ-স্মৃতি আছে। তাই তারা এবার শুধু নৌকাবাইচয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এবার প্রতিটি গ্রামে ঐতিহ্যের দাওয়াতি কুস্তি খেলাও হবে। এছাড়া হাডুডু, প্রীতি ফুটবল, ষাঁড়ের লড়াই, বাড়ির উঠোনে জড়ো হয়ে রাতবিরাতে বসবে মালজোড়, কেচ্ছা ও পুঁথিপাঠের আসর। পুরো বছরজুড়ে থাকবে বিয়েশাদিসহ নানা রকমের আনন্দ আয়োজন। সম্প্রতি গানের আসরের সঙ্গে হাওরে বেশি আয়োজন করা হয় দাওয়াতি কুস্তি খেলার। এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রামের মানুষকে খেলার জন্য দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, দাওয়াতি গ্রামে কয়েক শ’ মানুষের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। রাতে চলে আড্ডা আর গান-বাজনা। এতে এক গ্ৰামের মানুষের সঙ্গে অন্য গ্রামের মানুষের সৌহার্দ্য বাড়ে। অনেক সময় গড়ে ওঠে আত্মীয়তা এবং বিয়েশাদির সম্পর্ক ।
ধান, মাছ, পাথর এগুলোকে পুঁজি করে সুনামগঞ্জের হাওরের মানুষরা বেঁচে আছেন। হাওরের ধানের ওপরই সুনামগঞ্জের প্রায় চার লাখ কৃষক পরিবারের পুরো এক বছরের সংসার খরচ ছাড়াও সন্তানের লেখাপড়া, বিয়েশাদি, আনন্দ-উৎসব সবকিছু নির্ভর করে। যে বছর হাওরের ধান ভালোভাবে কৃষকের ঘরে ওঠে, সে বছর হাওরের মানুষদের আনন্দের সীমা থাকে না। আর কোনো কারণে যদি হাওরের ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তাদের কষ্টের অন্ত থাকে না।
হাওরে বৈশাখ মাসজুড়ে চলে ধান কাটা আর ঘরে তোলার উৎসব। সম্প্রতি ধান কাটার এই উৎসব শেষ হয়েছে। ধান ঘরে তোলার পর হাওরের মানুষের খুব একটা কাজ থাকে না। তাই বর্ষাজুড়ে থাকে নানারকম আনন্দ আয়োজন। এবার সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকদের ঘরে ঘরে গোলাভর্তি ধান। তাই তারা এবার আনন্দে ভাসছে। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে তারা আয়োজন করছে গান-বাজনা আর নানারকমের খেলাধুলার।