প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম

04 Sep 2024, 01:28 PM আকাশলীনা শেয়ার:
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম

টেলিভিশন নাটকের শুরু থেকে এই পর্যন্ত অনেক অভিনয়শিল্পীকে দেখেছেন দর্শক। তাদের সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন জয় করে তাদের হৃদয়ে আসন করে রেখেছেন অনেক অভিনয়শিল্পী। এদের নিয়েই এবারের আয়োজন টিভিনাটকের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মেরা। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

টেলিভিশন নাটকের প্রথম প্রজন্মের অভিনেত্রীর কথা উঠলেই যে নামটি প্রথমে উঠে আসে তিনি হচ্ছেন ফেরদৌসী মুজমদার। কেবল প্রথম প্রজন্ম বললেও কম বলা হবে। টেলিভিশনের প্রথম নাটকের অভিনেত্রীও তিনি। তার অভিনীত নাটকটির নাম ‘একতলা দোতলা’। এরপর বহু বছর তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কেবল টেলিভিশন নাটকেই নয়, থিয়েটারেও তিনি সরব। বেতারেও প্রচুর নাটক করেছেন। কিছু ছবিতেও কাজ করেছেন। বিটিভিতে প্রচারিত বহুল আলোচিত নাটক সংশপ্তক-এ হুরমতি চরিত্রে অভিনয় করে সব মানুষের মনে জায়গা করে নেন গুণী এই অভিনেত্রী। প্রথম প্রজন্মের অভিনেত্রীদের তালিকায় আরো যাদের নাম উঠে আসে তারা হলেন ডলি আনোয়ার, আলেয়া ফেরদৌসী, শর্মিলী আহমেদ, আজমেরী জামান রেশমা, দিলশাদ খানম প্রমুখ। ওই সময়ে সুজাতা ও রোজী সামাদও টিভি নাটকে অভিনয় করেন। যদিও পরে তারা সিনেমায় নিয়মিত হন। ডলি আনোয়ারও সিনেমায় অভিনয় করেন। ডলি আনোয়ারের উল্লেখযোগ্য সিনেমার নাম ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। ডলি আনোয়ারের আলোচিত নাটক ‘বকুলপুর কত দূর’, ‘জোনাকি জ্বলে’ প্রভৃতি।

‘নিধুয়া পাথার কান্দে’ নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন আলেয়া ফেরদৌসী। শর্মিলী আহমেদ অভিনীত ওই সময়ের আলোচিত নাটক ‘মালঞ্চ’। এছাড়া বিটিভির ইতিহাসে প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘দম্পতি’তে অভিনয় করেন শর্মিলী আহমেদ। আজমেরী জামান রেশমা আলোচনায় আসেন ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’, ‘ধূপছায়া’, ‘বিষুবরেখা’, ‘শেষের কবিতা’সহ আরো বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে। দিলশাদ খানম ব্যাপক পরিচিতি পান ‘রক্তকরবী’ নাটকে অভিনয় করে। অন্যদিকে সমালোচকেরা দিলশাদ খানমকে প্রথম প্রজন্মের একটুু পর এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের একটু আগের শিল্পী বলে অভিহিত করেন।

দ্বিতীয় প্রজন্ম টেলিভিশন নাটকের অভিনেত্রীদের মধ্যে সুবর্ণা মুস্তাফা, মিতা চৌধুরী, রিনি রেজা, শম্পা রেজা, সারা যাকের, প্রিসিলা পারভীন, আফরোজা বানু প্রমুখ।

এদের মধ্যে মিতা চৌধুরী ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। রিনি রেজা আলোচনায় আসেন ‘রক্তে আঙুরলতা’ নাটকে অভিনয় করে। ‘ইডিয়ট’ শিরোনামের একটি নাটকে অভিনয় করেই তারকা বনে যান শম্পা রেজা। তারপর চার বছর অভিনয় করেননি শম্পা রেজা। চার বছর পর ফিরে আসেন ‘অশ্রুত গান্ধার’ নাটকে অভিনয় দিয়ে। প্রিসিলা পারভীন আলোচনায় আসেন ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ নাটকে অভিনয় করে। আফরোজা বানু আলোচনায় আসেন ‘কুমুর নিজের জীবন’ নাটকে অভিনয় করে। অন্যদিকে ‘সকাল সন্ধ্যা’ ধারাবাহিকে শিমু-ভাবি চরিত্রটিতে অভিনয় করে নাট্যাঙ্গনে আলোচনার জন্ম দেন আফরোজা বানু।

দ্বিতীয় প্রজন্মের এইসব আলোচিত অভিনেত্রীদের সঙ্গে একটা সময়ে এসে অভিনয় শুরু করেন নায়লা আজাদ নূপুর। তারও পরে এসে নাম লেখান শান্তা ইসলাম, তারানা হালিম, লুতফুন নাহার লতা, শায়লা নেসার, আন্নি বেগ, তারানা হালিম প্রমুখ। ‘স্নেহ’, ‘যত দূরে যাই’, ‘ঢাকায় থাকি’ তারানা হালিমের ক্যারিয়ারের আলোচিত নাটক। লুতফুন নাহার লতার আলোচিত নাটক ‘বহুব্রীহি’। এদিকে সুবর্ণা মুস্তাফার কিছুটা পরে এসে অভিনয়ে নাম লেখান ডলি জহুর। ডলি জহুরের আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কুসুম’, ‘দৃষ্টিদান’। তবে, সেই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে যার নাম উঠে আসে, তিনি সুবর্ণা মুস্তাফা। তার সমসাময়িক অভিনেত্রীদের তালিকায় উঠে আসে কেয়া চৌধুরী ও রেহনুমার নামও।

তৃতীয় প্রজন্মের আগমন নব্বই দশকে। এই সময়ের অভিনেত্রীরা হলেন শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমি, নুসরাত ইয়াসমিন টিসা, দীপা ইসলাম, উমি হাসিন, সাবিনা বারী লাকী, মুনিরা ইউসুফ মেমী, ত্রপা মজুমদার, ফারজানা অপি, তাহমিনা, তমালিকা, আবিদা আলী, বিজরী বরকতউল্লাহ, মিতা নূর, সিতিমা এনাম, রুবিনা পারভীন রুনা প্রমুখ।

তৃতীয় প্রজন্মের অন্যতম অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের প্রথম নাটক প্রচার হয় ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর বিপাশা হায়াত আলোচনায় আসেন ‘সুপ্রভাত ঢাকা’ নাটকে অভিনয় করে।

১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘কে বা আপন কে বা পর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিষেক হয় শমী কায়সারের। শমী কায়সার আলোচিত হন ‘যত দূরে যাই’ নাটকে অভিনয় করে। এরপর দর্শকপ্রিয়তা পান ‘কোন কাননের ফুল’, ‘ছবি শুধু ছবি নয়’, ‘অন্য শিকারি’, ‘ছোটো ছোটো ঢেউ’ নাটকে অভিনয় করে। তমালিকা আলোচনায় আসেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। একই নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন আফসানা মিমি ও বিজরী বরকতউল্লাহ।

চতুর্থ প্রজন্মের শুরু হয় তারিন ও ঈশিতাকে দিয়ে। তারিন ও ঈশিতার অভিনয়ের একবছরের মধ্যে টিভি নাটকে নাম লেখান অপি করিম। তারপর আসেন রিচি সোলায়মান। কিছুদিন পর আগমন ঘটে জয়া আহসানের। যদিও তারিন, ঈশিতা, অপি ও রিচি শিশুশিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন। কিন্তু শমী-মিমি-বিপাশার পরের জেনারেশনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন তারিন ও অপি করিম। একটা সময়ে এসে জয়া আহসানও নিজের আসন পোক্ত করে নেন।

পঞ্চম প্রজন্ম শুরু মেহের আফরোজ শাওন, সুমাইয়া শিমু, দীপা খন্দকার, নাদিয়া আহমেদ, চাঁদনী, সানজিদা প্রীতি, গোলাম ফরিদা ছন্দা প্রমুখ অভিনেত্রীদের দিয়ে। এরা প্রত্যেকেই প্রায় বিশ বছর ধরে অভিনয় করছেন এবং এখনো অভিনয়ে নিয়মিত সবাই। প্রত্যেকের রয়েছে জনপ্রিয় নাটক। এরপর অভিনয়ে আসেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। তিশা একটা সময়ে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। অসংখ্য ভালো নাটকে তিশা অভিনয় করেন। সিনেমায়ও ক্যারিয়ার গড়েন। দুই মাধ্যমেই তিশার জনপ্রিয়তা। এই প্রজন্মে পরবর্তীসময়ে আসেন শ্রাবন্তী। তিনি বেশ দাপটের সঙ্গে কাজ করেন।

জাকিয়া বারী মম টিভিনাটকের ষষ্ট প্রজন্মের অভিনেত্রী। শ্রাবস্তী তিন্নিও এই সময়ের আরেকজন আলোচিত অভিনেত্রী। যদিও তিন্নি পরে নিজের ক্যারিয়ার ধরে রাখতে পারেননি। এই প্রজন্মের অন্যান্য অভিনেত্রীদের মধ্যে রয়েছেন সোহানা সাবা, বিদ্যা সিনহা মিম, বাঁধন, বিন্দু, মুনমুন, প্রভা, নওশীন, সারিকা, নোভা প্রমুখ।

সপ্তম জন্মের আলোচিত মুখ মেহজাবীন ও তানজিন তিশা। এখন পর্যন্ত তারা সাবলীল অভিনয় দিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। এছাড়া তানিয়া বৃষ্টি, অহনা, নাদিয়া মিম, সাফা কবির, নাদিয়া নদীদেরও এই প্রজন্মের কাতারে রাখা যায়।

বর্তমান প্রজন্মে মেহজাবিনদের পরের কাতার ধরলে সবচেয়ে আলোচনায় কেয়া পায়েল, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, তাসনিয়া ফারিন, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, মিম চৌধুরী, ইফফাত আরা তিথি। যদিও সপ্তম প্রজন্মের দৌরাত্মই চলছে এখনো। সেখানে পঞ্চম, যষ্ঠ থেকেও অনেকে সমানতালে অভিনয় করে যাচ্ছেন। তবে গেল দুয়েক বছরের হিসেব ধরলে সবচেয়ে আলোচনায় জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, কেয়া পায়েল, তাসনিয়া ফারিন, নাজনীন নাহার নিহা ও তানজিম সাইয়ারা তটিনী।