‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।’
ভালোবাসা-প্রেম, এখনো প্রকৃতির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও রহস্যময় আবেগ। প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া কোনো মানুষই পরিপূর্ণ নয়। আজও মানুষের বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়স্থল হলো ভালোবাসা। মানুষ এই ভালোবাসার জন্যই বেঁচে থাকার শক্তি পায় আবার ভালোবাসা শূন্য হলে নিঃশেষ হয়ে যায়। তবুও কবির মতো সবাই বারবার শতরূপে ভালোবাসতে চায়। তবে, যুগে যুগে বদলেছে প্রেম ভালোবাসার ধরন ধারণ। চিঠির জায়গা দখল করেছে মুঠোফোনের মেসেজ। একে অপরকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না বছরের পর বছর। প্রযুক্তির কল্যাণে ভিডিও কলে প্রিয় মানুষটির মুখ দেখা যায় যেকোনো সময়ে। কিন্তু মানুষ ভালোবাসতে ভোলেনি। তবে, কি গভীরতা বেড়েছে এখনকার ভালোবাসায় ? না হয়েছে ঠিক উল্টো। ভালোবাসার চিরন্তন সৌন্দর্য যেন বেশ ম্লান এখন।
আজকের যুগে ভালোবাসা এক ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চিন্তাচেতনা, জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তির বিকাশ ভালোবাসার ধরনও বদলে দিয়েছে। আগেকার দিনে ভালোবাসা ছিল অপেক্ষা, চিঠির আদান-প্রদান, একে অপরের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করার মতো ধৈর্যের পরীক্ষা। কিন্তু বর্তমান যুগের ভালোবাসা অনেকটাই গতিময়, প্রযুক্তিনির্ভর এবং বহুমাত্রিক। আজকের ভালোবাসার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো প্রযুক্তি। সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মেসেজ, ভিডিও কল, ইমোজি- সবকিছুই ভালোবাসার প্রকাশ সহজ করে তুলেছে। আগে যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের অপেক্ষায় দিন কাটাতো, এখন সেখানে মুহূর্তেই দূরত্ব ঘুচে যায় এক ক্লিকেই।
আগে প্রেম মানেই ছিল গভীর অনুভূতির বিষয়, যেখানে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করত। কিন্তু আধুনিক যুগে সম্পর্কগুলো অনেকটাই তাৎক্ষণিক ও স্বল্পস্থায়ী হয়ে উঠেছে। দ্রুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, আবার তেমনই দ্রুত ভেঙেও যায়। ভালোবাসার সংজ্ঞা এখন অনেকের কাছে পরস্পরের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। আধুনিক যুগের ভালোবাসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের গুরুত্ব। মানুষ এখন ভালোবাসার মধ্যেও নিজস্ব সীমানা বজায় রাখতে চায়। সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং পারস্পরিক সম্মানের বিষয়গুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
যদিও প্রযুক্তির কারণে যোগাযোগ সহজ হয়েছে, তবুও অনেক সময় এই ভার্চুয়াল প্রেমই ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ এবং বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের যুগে মানুষ অনেক সময় বাহ্যিক চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃত ভালোবাসার অনুভূতিকে ভুলে যায়। অনলাইনে সম্পর্ক শুরু হলেও বাস্তব জীবনে টিকিয়ে রাখা অনেক সময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ভালোবাসা যুগে যুগে রূপ বদলালেও, তার মূল সত্তা এখনো একটাইÑ একে অপরের প্রতি টান, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সম্মান। প্রযুক্তির এই গতিময় যুগেও ভালোবাসার গভীরতা বজায় রাখা সম্ভব, যদি সম্পর্কের ভিত্তি হয় বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও আন্তরিকতা। ভালোবাসা এখন অনেকটাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে। তবে সত্যিকারের ভালোবাসা সব-সময়ই বিশেষ কিছু, যা সময়, দূরত্ব ও পরিবর্তনের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী হয়ে থাকে। সম্পর্ক যতই ভার্চুয়াল হোক, প্রকৃত অনুভূতির গুরুত্ব কখনোই কমে না। ভালোবাসা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতায় গড়ে ওঠে।
মডেল : শাকিল ও সোনালী
লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন