টিভিতে প্রথম সংবাদ উপস্থাপনের আগের দিন বরের কাছ থেকে গাড়ি উপহার পান লোপা

23 Jul 2023, 01:38 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
টিভিতে প্রথম সংবাদ উপস্থাপনের আগের দিন বরের কাছ থেকে গাড়ি উপহার পান লোপা

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, মিষ্টি কণ্ঠ, সুন্দর বাচনভঙ্গি ও আকর্ষণীয় চেহারা এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোণা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক মৌসুমী আহমেদ লোপা তাদের মধ্যে অন্যতম। ছেলেবেলা থেকেই নাচ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন তিনি। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপকের বিস্তারিত আনন্দভুবন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...


মৌসুমী আহমেদ লোপার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার স্বপ্ন ছিল সেই ছেলেবেলা থেকেই। সবসময় তার ভাবনায় ছিল বড়ো হয়ে সংবাদ উপস্থাপক হবেন। তার জন্ম একটি সাংস্কৃতিক পরিবারে। বাবা, বড়ো ভাই, বড়ো বোন গান করতেন আর লোপা নাচ শিখতেন। পাশাপাশি স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন। প্রতিটি কাজেই মাকে পাশে পেয়েছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে পরিবারের সবাই উৎসাহ দিতেন। লোপা যখন ক্লাশ টু-তে পড়েন তখনই বড়ো ভাই লিটন ‘শাব্দিক সাংস্কৃতিক একাডেমি’তে নাচ শেখার জন্য ভর্তি করে দেন। তখন থেকেই তার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখা। এসবই তাকে সংবাদ উপস্থাপক হতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরাও তাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। তবে সেই স্বপ্ন পূরণে পুরো কৃতিত্ব তার স্বামী মারুফ আহমেদের। তিনি লোপার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার প্রবল ইচ্ছার কথা জানতেন। তাই ঢাকায় এসেই সিভি তৈরি করে নিজেই ড্রপ করেছেন ভালো ভালো চ্যানেলগুলোতে। এরপর কয়েকটি চ্যানেল থেকে ডাকা হয়। তারপর সেখান থেকে সময় টিভিতে লিখিত পরীক্ষা, ভাইবা এবং অডিশন দেন এবং সুযোগও পেয়ে যান। এরপর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সময় টিভি থেকে যমুনা টিভিতে যোগ দেন। এখনও যমুনাতেই আছেন। এর আগে বাংলাদেশ বেতার রংপুর এবং রাজশাহী কেন্দ্রে কাজ করেছেন এগার বছর।

সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার ব্যাপারে পরিবার থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আপনি তো জানেন, এই পেশায় টাইম সিডিউল ফিক্সড থাকে না। দিন-রাত-ভোর যখন তখন কাজ থাকতে পারে। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া খুব কঠিন এই কাজ করা। আমি শুরু থেকেই পুরো সহযোগিতা পেয়ে আসছি পরিবার থেকে। বিয়ের আগে যখন রেডিওতে ছিলাম তখন বাবা-মা, ভাইবোন খুব সহযোগিতা করত। ২০০২-এর দিকে মা আমাকে রেডিওতে নিয়ে যেতেন আর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতেন। বিয়ের পর আমার স্বামী মারুফ আহমেদের কাছ থেকে উৎসাহ, সহযোগিতা সবই পাচ্ছি।’

প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আপনার প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ? ‘প্রথম সংবাদ পাঠ ছিল আমার কাছে স্বপ্ন পূরণের দিন। একটা অন্যরকম অনুভূতি ছিল আমার ভেতর। তবে কেন যেন প্রথমদিন সংবাদ উপস্থাপনা করতে গিয়ে আমার ভেতর কোনো ধরনের ভয় কাজ করেনি। শুধু একটা চিন্তা ছিল আমাকে ভালো করতে হবে। কতটুকু ভালো করতে পেরেছি জানি না। তবে, প্রথম নিউজ পড়া শেষে অফিসের সবাই বলেছিল তুমি ভালো করবে। বাসার এবং বন্ধুদের সবার কাছ থেকেই উৎসাহ পেয়েছি। আরেকটা কথা শেয়ার না করলেই নয়, আজ থেকে প্রায় একযুগ আগে আমি যেদিন সময় টিভিতে প্রথম সংবাদ উপস্থাপন করতে যাব, তার একদিন আগে আমার স্বামী মারুফ আমাকে ফোন করে বললেন, দশ মিনিট পর বাসার নিচে নামো। আমি বাসার নিচে নেমে সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম। আমার সামনে একটা অ্যালিয়ন গাড়ি। গাড়ির চাবি দিয়ে মারুফ আমাকে বলল, এটা তোমার গাড়ি। কাল অতদূরে অফিস করতে কীভাবে যাবে, তাই কিনলাম। প্রথম সংবাদ উপস্থাপন করার জন্য এটা আমার জন্য একটা বড়ো সারপ্রাইজ। আমার কাজের প্রতি তার কতটা শ্রদ্ধা আর সাপোর্ট সেটা আমি সেদিন বুঝেছি। পরদিন ওর কিনে দেওয়া গাড়িতে আমি প্রথম সংবাদ উপস্থাপন করতে সময় টিভিতে যাই।’

একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা দরকার বা কী কী জানা দরকার বলে আপনি মনে করেন ? এমন জিজ্ঞাসার জবাবে লোপা বলেন, ‘একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপকের প্রথমেই শুদ্ধ উচ্চারণে স্পষ্টভাবে কথা বলা রপ্ত করতে হবে। বাচনভঙ্গি হতে হবে সুন্দর। তার মিষ্টি এবং আকর্ষণীয় কণ্ঠ থাকতে হবে। একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপককে নিউজের কনটেন্ট অনুযায়ী এক্সপ্রেশন দিতে হবে। তবে সব এক্সপ্রেশনেই পরিমিতিবোধ থাকতে হবে। সংবাদ এতটাই সাবলীলভাবে পড়তে হবে যে, দর্শক যেন আগ্রহ নিয়ে খবর দেখে। পোশাক ও সাজ সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। এমন কোনো পোশাক পরা যাবে না, সাজগোজ করা যাবে না, যা সংবাদকে ছাপিয়ে যায়। দেশের ভেতর এবং বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্যই জানা থাকতে হবে। তাৎক্ষণিক যেকোনো পরিস্থিতিতে ভীত না হয়ে দক্ষতার সাথে সামলে নিতে হবে। নিজেকে একজন নিউজম্যান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ 

সাক্ষাৎকার : শহিদুল ইসলাম এমেল