উপস্থিত বুদ্ধি অনেক সমস্যা থেকে উতরে দেয় -জাকিয়া জাবের

22 Aug 2023, 01:30 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
উপস্থিত বুদ্ধি অনেক সমস্যা থেকে উতরে দেয় -জাকিয়া জাবের

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন এটিএন নিউজ-এর জাকিয়া জাবের তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপকের বিস্তারিত আনন্দভুবনের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো...



জাকিয়া জাবের সংবাদ উপস্থাপক হবেন এমন ইচ্ছা, স্বপ্ন বা পরিকল্পনা কখনোই ছিল না। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর অ্যাডমিশন টেস্টের পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন কারণেই তিনি বেশ হতাশায় ভুগছিলেন। তখন তার মা তাকে সবসময় বলতেন, কোনো একটা কোর্সে ভর্তি হতে। সেটা যেকোনো কোর্সই হোক না কেন, যাতে অন্তত মনোযোগটা ওইদিকে থাকে। মায়ের কথামতো খোঁজ নিয়ে দেখেন, একটি প্রতিষ্ঠানে সংবাদ উপস্থাপনার একটা কোর্স শুরু হতে যাচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যেই। সেটা দেখে কোনো চিন্তাভাবনা না করেই ভর্তি হয়ে যান সেখানে। ক্লাস শুরু করে দেন। ক্লাসগুলো তার কাছে খুবই ভালো লাগত, সেইসঙ্গে নতুন বেশ কিছু বন্ধুও জুটে গেল। ক্লাসের মজা, আর নতুন বন্ধুদের জন্যই নিয়মিত ক্লাস করতেন তিনি। সত্যি বলতে তখনো সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন না বা সংবাদ উপস্থাপক হবেন এমন বিশ্বাস নিজের মনে গড়ে ওঠেননি। তবে ওখানকার প্রশিক্ষকগণ যারা ক্লাস নিতেন, তারা খুব প্রশংসা করতেন আর খুবই উৎসাহ দিতেন তাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সংবাদ উপস্থাপনার লিজেন্ড বলা যায় যাকে, শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম একদিন এসেছিলেন তাদের ক্লাস নিতে। উনি বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবার ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। সেদিন শুধুমাত্র তার বেলাতেই উনি ভুল কম ধরে প্রশংসা বেশি করেছেন। সেদিনের পর থেকেই মনে হলো হয়ত তিনি পারবেন সংবাদ উপস্থাপনায় আসতে। তাকে দিয়ে বোধহয় সম্ভব। এই বিশ্বাসটা তার মধ্যে জন্মানোর পরই বিষয়টাকে তিনি সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই একদম মন দিয়ে লেগে পড়েন সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্যে। তারপর থেকেই অনেক অনেক প্র্যাকটিস করেছেন, নিজেকে প্রতিনিয়তই আরো উন্নত করেছেন, ভুল করেছেন, ভুল করতে করতে শিখেছেন। জাকিয়া জাবের প্রথম সিভি জমা দিয়েছিলেন এটিএন নিউজে, প্রথম অডিশনও দিয়েছেন এখানেই। ধাপে ধাপে বেশ কিছু অডিশন-পর্ব পার করে তারপরই প্রথম অনএয়ারের সুযোগ পান এবং সত্যি সত্যিই সংবাদ উপস্থাপক বনে যান।

ছেলেবেলা থেকে সংবাদ পঠের কথা না ভাবলেও জাকিয়া কিন্তু স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন, বক্তৃতা করেছেন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়তেন। স্কুলে আপারা বই থেকে রিডিং পড়তে দিতেন তাকে, তিনি রিডিং পড়তেন, আপা ওই অংশটা ক্লাসের অন্যদের বুঝিয়ে দিতেন।

জাকিয়া জাবেরের সংবাদ উপস্থাপনায় আসার ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা এবং উৎসাহ ছিল। বিশেষ করে তার মায়ের অসম্ভব সহযোগিতা ছিল সংবাদ উপস্থাপক হয়ে ওঠার পেছনে। তবে, সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে টিকে থাকার পেছনে তার ছোটোভাই এবং বন্ধুদের মানসিক সহযোগিতার কথা অবশ্যই বলতে হয়। এরা তার সবচেয়ে বড়ো সাপোর্টার।

প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রথম সংবাদ পাঠ বা এটিএন নিউজে আমার প্রথম অনএয়ারের গল্প একদিক থেকে বেশ মজার। কারণ, আমার প্রথম অনএয়ার হয়েছিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আমার জন্মদিনের দিন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ওইদিনটা তাই এই দুটো কারণে খুব স্পেশাল আমার কাছে। ওই নিউজটা অনেক রাতে ছিল, রাত ২টার সংবাদ ছিল এবং রোজার মাস ছিল। তবুও আমার পুরো পরিবার এবং আমার সব বন্ধুরা এত রাত পর্যন্ত জেগে ছিল শুধুমাত্র আমার প্রথম সংবাদ উপস্থাপনা দেখবে বলে। আমি নিজেও কিছুটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তবে, সুন্দর এবং ঠিকঠাকভাবেই নিউজ শেষ করেছিলাম। অফিসের সবাই বেশ প্রশংসা করেছিলেন। সেবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা যেমন পেয়েছিলাম, সমানভাবে সংবাদ উপস্থাপনার জন্য অনেক অনেক মানুষের অনেক শুভকামনাও পেয়েছিলাম।’

জাকিয়া জাবেরের মতে, একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য জরুরি হচ্ছে শুদ্ধ উচ্চারণ জানা এবং বাচনভঙ্গি সুন্দর হওয়া। এছাড়াও সংবাদ উপস্থাপকদের অবশ্যই নিউজি এবং আপ-টু-ডেট হওয়া প্রয়োজন। কখন কোথায় কী ঘটছে, সব খবর মাথায় রাখা খুব জরুরি। সংবাদের মুডটা ধরতে পারা এবং মুড বুঝে পড়া খুব প্রয়োজন। এছাড়াও সময়জ্ঞান থাকা, দায়িত্বশীল হওয়া, আত্মবিশ্বাস, স্মার্টনেস, সাজসজ্জা পোশাকের জ্ঞান থাকা এবং একজন সংবাদ পাঠকের উপস্থিত বুদ্ধি থাকাটাও বেশ প্রয়োজন।’

সংবাদ উপস্থাপনা করতে গিয়ে কোনো বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন কি ? ‘খুব একটা বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি এখনো। তবে একবার অটোকিউ বা যেটা দেখে আমরা সংবাদ পড়ি, ওটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমাকে টানা তিন ঘণ্টার তিনটা বুলেটিন অটোকিউ ছাড়া, ল্যাপটপে থাকা স্ক্রিপ্ট দেখে এমনভাবে পড়তে হয়েছে যেন আমি আসলে অটোকিউ দেখেই পড়ছি। আমিও লাইন মনে রেখে রেখে এমনভাবে পড়েছিলাম, প্রডিউসার বলেছিলেন আমাকে দেখে বোঝাই যায়নি যে আমার সামনে অটোকিউ নেই।’

অবসরে গান শুনতে, সিনেমা দেখতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে খুবই পছন্দ করেন জাকিয়া জাবের। মায়ের হাতের রান্না করা সব খাবারই তার প্রিয়।

লেখা : শহিদুল ইসলাম এমেল