রেসলিংয়ের ইতিকথা ও ভারতে রেসলিং উন্মাদনা

05 May 2021, 07:41 PM ক্রীড়াভুবন শেয়ার:
রেসলিংয়ের ইতিকথা ও ভারতে রেসলিং উন্মাদনা

একটা ২০ ফুট স্কয়ার রিং ঘিরে হাজারো দর্শকের উল্লাস-হর্ষধ্বনি, পুরো স্টেজ-জুড়ে বিপুল আলো আর ধোঁয়ার কারিশমা, স্টেজের ওপরে টেলিভিশনের বিশাল পর্দা থেকে ভেসে আসছে বিচিত্র সব আওয়াজ- এমন সময়ই সব কিছু ছাপিয়ে ধারাভাষ্যকারের চিৎকার... আর তখনই সবার চোখ পড়ে স্টেজে ঢোকার রাজকীয় দরজার দিকে ; যেখান থেকে হেঁটে আসছেন বিশালদেহী এক রেসলার...! বলছিলাম সারাবিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলাধুলাভিত্তিক বিনোদন সংস্থা, ওয়ার্ল্ড রেস্লিং এন্টারটেইনমেন্ট [ডাব্লিউ ডাব্লিউই]-তে প্রচারিত একটি রেস্লিং শোয়ের কথা। কিন্তু যে সংস্থাটি গোটা দুনিয়ায় প্রায় ৩৬ মিলিয়ন দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে ; তার সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন..? চলুন তবে, আর দেরি না করে জেনে আসি এই উন্মাদনার ইতিবৃত্ত...


প্রাচীন কুস্তি বা মল্লযুদ্ধই যে, আজকের দিনের আধুনিক রেসলিংয়ের পূর্বসূরি সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, এই কুস্তি বা মল্লযুদ্ধই হচ্ছে মানুষের আবিষ্কৃত প্রাচীন খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পুরুষের শারীরিক শক্তি আর সামর্থ্য প্রদর্শনের এই প্রতিযোগিতা ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল এ-বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু খ্রিষ্টের জন্মেরও প্রায় ৭০০০ বছর আগে অর্থ্যাৎ নবোপলীয় যুগের গুহাচিত্রে দুটি নগ্ন পুরুষের মল্লযুদ্ধ আর তাদের ঘিরে থাকা জনতার ছবি উদ্ধার করা হয় মঙ্গোলিয়ার বায়ংকহোঙ্গার প্রদেশ থেকে। এটাই এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত কুস্তির সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। পরবর্তীসময়ে আরো অনেক চিত্রে, নথিতে কিংবা ব্যবহার্য সামগ্রীতে এই খেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। সে সব কতকাল আগের কথা...

তবে আধুনিক কুস্তি বলতে আমরা যে খেলাটিকে বুঝি- তার শুরুটা হয়েছিল উনিশ শতকের শুরুর দিকে, ইউরোপে। সে-সময়কার কিছু বিখ্যাত কুস্তি প্রতিযোগিতার নাম ছিল ‘এডওয়ার্ড দ্য স্টিল ইটার’, ‘বোনাট, দ্য অক্স অব লো আল্পস’ বা ‘গুস্তাভ ডি অভিগনন, দ্য বোন রেকার’। এ সময় থেকেই ফ্রেঞ্চ, গ্রিক এবং রোমানদের হাত ধরে প্রতিযোগিতামূলক কুস্তি খেলা সারা ইউরোপে প্রসার লাভ করে। এ কারণে গোটা মহাদেশেই ব্যাপকভাবে শরীরচর্চা কেন্দ্রগুলো গড়ে উঠতে থাকে, যেগুলো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা শুরু হয়। উনিশ শতকের শেষ দিকে এসে এই খেলার জনপ্রিয়তা পৌঁছে যায় তৎকালীন গ্রেট ব্রিটেন ছাড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত। এ সময়ের কিছু বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় কুস্তিগির ছিলেন : জর্জ হ্যাকস্চমিট, মার্টিন ফার্মার বার্ন, উইলিয়াম মুলদুন, ফ্রাঙ্ক গচ, কনস্ট্যান্ট লাউক্স এবং স্ট্যানিসলাস জবিস্কো প্রমুখ।

বিশ শতকের শুরুতে এসে পেশাদার কুস্তি প্রতিযোগিতায় একটা মজার পরিবর্তন আসে, যার কাছে আজকের পেশাদার রেসলিং বিশেষভাবে ঋণী। এর আগে পর্যন্ত কুস্তিকে কেবল শক্তিমত্তার প্রতিযোগিতা হিসেবেই গণ্য করা হতো। কিন্তু এই সময় থেকে কুস্তিতে নানারকম শারীরিক কসরৎ, অঙ্গভঙ্গি এবং কোরিওগ্রাফির প্রচলন শুরু হয়, যা কুস্তি অনুষ্ঠানটিকে কেবল প্রতিযোগিতা নয় ; বরং একটি বিনোদনমূলক আয়োজনে রূপ দিতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে, গত শতকের দ্বিতীয় দশকে রেসলিং আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুটো স্বতন্ত্র বিভাগে ভাগ হয়ে যেতে শুরু করে ; যার একদলের উদ্দেশ্য সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা আর আরেক দলের উদ্দেশ্য কেবল দর্শকদের বিনোদন দেওয়া। ১৯২১ সাল থেকে অপেশাদার এবং প্রতিযোগিতামূলক কুস্তি আয়োজনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েটেড রেসলিং স্টাইলস (FILA) দায়িত্ব গ্রহণ করে। আর বিনোদনমূলক এবং কাহিনিনির্ভর পেশাদার রেসলিং চলতে থাকে তার আপন গতিতে, যার সবচেয়ে বড়ো বাজারটা আজ WWE-এর নিয়ন্ত্রণে।

ক্যাপিটল রেসলিং করপোরেশন লিমিটেড (CWC), যার শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালে রডরিক জেমস ম্যাকম্যান (যিনি জেস ম্যাকম্যান নামেই বেশি পরিচিত) এবং টুটস মোন্ট-এর হাতে, এটাকেই আজকের ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট (WWE) এর পূর্বসূরি বলা যায়। এর মাত্র দুই বছরের মাথায় জেস ম্যাকম্যান মারা গেলে তাঁর ছেলে ভিনসেন্ট জে. ম্যাকম্যান CWC-তে যুক্ত হন। শুরুতে সংস্থাটি বেশ ভালো ব্যবসা করতে থাকলেও, ছয়ের দশকের শেষ দিকে এসে বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রায় ২০ বছর পর, সেই ভিন্স জে. ম্যাকম্যান-এর ছেলে কেনেডি ম্যাকম্যান এবং তাঁর স্ত্রী লিন্ডা ম্যাকম্যান মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘টাইটান স্পোর্টস’; যার ট্রেডমার্ক ছিল ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশন’ (WWF)। ব্যবসা শুরুর মাত্র তিন বছরের মাথায় সারা যুক্তরাষ্ট্রে একযোগে ডডঋ-এর ম্যাচগুলোর টেলিভিশন স¤প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ব্যস, তারপর থেকে আর এ সংস্থাটিকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০১ সালেই WWF তাদের অন্যতম প্রতিদ্ব›দ্বী ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ রেসলিং’ (WCW) কিনে নেয়, এবং সারাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো রেসলিং বিনোদন বিপণনকারী কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মাঝে ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড-এর দায়ের করা একটি মামলার কারণে নিজেদের ট্রেডমার্ক পরিবর্তন করে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট’ (WWE) রাখতে হয়।

২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ সংস্থাটির মোট আয় প্রায় ৯৬০.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!


ভারতীয় রেসলিং উন্মাদনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে, WWE-এর সবচেয়ে বড়ো ফ্যানবেজ ভারতের দখলে। কিন্তু পেশাদার রেসলার তৈরিতে এর প্রভাব খুব একটা লক্ষণীয় নয়। তবে সা¤প্রতিক সময়ে বেশ কিছু আলোচিত রেসলার WWE-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন। এখানে পাচ্ছেন এ যাবৎ কাল পর্যন্ত WWE-এর সঙ্গে কাজ করা ভারতীয় কয়েকজন রেসলার সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।


গামা সিং

রেসলিং জগতে গামা সিং নামে পরিচিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম রেসলারের পিতৃপ্রদত্ত নাম গার্দোয়ার সিং সাহোটা। ১৯৮০ সালে WWE-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের এই জনপ্রিয় খেলাটির সঙ্গে ভারতবর্ষের নাম যুক্ত করেন এ রেসলার। ১৯৮৫ সালে WWE TV-এর প্রাইম টাইম রেসলিং শো-তে জনি রোডস্-কে হারিয়ে ভারতের তথা গোটাবিশ্বের দর্শকদের নজরে আসেন তিনি। তবে, তিনি মূলত আন্ডারকার্ড ম্যাচগুলোতেই অংশগ্রহণ করতেন।

পরবর্তী সময়ে, ১৯০০ শতকের গোড়ার দিকে গোটা ভারতের অপরাজিত কুস্তিগির হিসেবে তাঁর নামকরণ হয় ‘গ্রেট গামা অব ইন্ডিয়া’। বর্তমানে তিনি ‘দেশি হিট স্কোয়াড’ নামে একটি রেসলিং সংগঠনের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। তাঁর আরেকটি বড়ো পরিচয় হচ্ছে, তিনি প্রাক্তন WWE চ্যাম্পিয়ন ‘জিনদার মহল’-এর চাচা।


টাইগার আলি সিং

গুরজিৎ সিং হান্স ; রেসলিং রিংয়ের টাইগার আলী সিং। কানাডায় জন্মগ্রহণ করা দ্বিতীয় প্রজন্মের এই ভারতীয় রেসলার WWE-এর সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৯৭ সালে। পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতেই কুয়েত কাপ জিতে নিয়ে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। এর পরের দুই বছর ; ১৯৯৮ সালে ‘ক্যাপিটাল কার্নেজ’ আর ১৯৯৯ সালের ‘রয়্যাল রাম্বেল’ এর মতো বড়ো আসরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে একটা আকাশচুম্বি ক্যারিয়ারের স্বপ্নই দেখছিলেন তিনি। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যেই ক্যারিয়ারের এই ঊর্ধ্বগতির পরও, তৎকালীন ভক্তদের কাছে নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারেননি এই কুস্তিগির। ফলে কুস্তি দক্ষতা উন্নয়নের নামে তাঁকে পাঠানো হয় পুয়ের্তো রিকো-র ‘ইন্টারন্যাশনাল রেসলিং এসোসিয়েশন’-এ। সেখানেই এক ইনজুরিতে পড়েন তিনি, যেটাকে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড়ো আঘাত হিসেবেই দায়ী করেন তিনি নিজেই।


দ্য গ্রেট খালি

ঝাড়া ৭ ফিট ১ ইঞ্চি উচ্চতার দালিপ সিং রানা ; রিং নেইম ‘দ্য গ্রেট খালি’-কে রেসলিং রিং ছাড়া সিনেমাতেও দেখে থাকতে পারেন। ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া এই আমেরিকান রেসলার হচ্ছেন WWE ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় যিনি ‘ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ’ জেতেন। ২০০০ সালে ‘অল প্রো রেসলিং’-এর হাত ধরে পেশাদার রেসলিং জীবনের শুরু করলেও ২০০৬ সালে WWE Universe-এ তাঁর অভিষেক হয় ; স্ম্যাকডাউনে দ্য আন্ডারটেকারকে হারানোর মধ্য দিয়ে। ২০১৪ পর্যন্ত তিনি WWE-এর সঙ্গেই ছিলেন। ২০১৫ সালে পাঞ্জাবে ‘কন্টিনেন্টাল রেসলিং ফেডারেশন’ নামে নিজেই একটি রেসলিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীসময়ে ২০১৭ সালে আবার WWE তে তাঁকে দেখা গেলেও, বছরখানেকের বেশি তিনি সেখানে সময় দেননি। রেসলিংয়ের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু টিভি শো-সহ চারটি হলিউড এবং দুটি বলিউড মুভিতে অভিনয়ও করেছেন।


জিনদার মহল

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান জিনদার মহলের জন্ম নাম যুবরাজ সিং ধেশি। WWE-এর মূল মঞ্চে পারফর্ম করা ভারতীয় রেসলারদের মধ্যে তাঁকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল রেসলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চাচা গামা সিংয়ের হাত ধরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সার্কিটে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের সূচনা হয় ২০০২ সালে। ২০১০ সালে WWE-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও, তাঁর অভিষেক হয় পরবর্তীবছরে আরেক ভারতীয় রেসলার দ্য গ্রেট খালির মুখোমুখি এক ম্যাচের মধ্য দিয়ে। তার পর থেকে অল স্টার রেসলিং, কন্টিনেন্টাল রেসলিং ফেডারেশন, প্রেইরী রেসলিং এলায়েন্স এবং স্ট্যাম্পেড রেসলিং-এর মতো নামি-দামি পেশাদার সংগঠনগুলোতে নিয়মিতভাবে পারফর্ম করার মধ্য দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। WWE-এর মঞ্চে তাঁর অর্জনটাও যেকোনো পেশাদার রেসলারের জন্য ঈর্ষণীয়। ২০১৭-১৮ সালের WWE চ্যাম্পিয়নশিপ, একবার WWE United States চ্যাম্পিয়নশিপ আর দ’বারের WWE ২৪/৭ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেওয়া ছাড়াও আরও অনেক সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। বর্তমানে হাঁটুতে ইনজুরির কারণে রেসলিং রিং থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও, ভক্তদের কাছ থেকে কতটা দূরে- সে প্রশ্ন থেকেই যায়।


কবিতা দেবী

WWE-তে অংশগ্রহণ করা ভারতের প্রথম পেশাদার নারী রেসলার কবিতা দেবী জন্ম গ্রহণ করেন হরিয়ানা প্রদেশের ঝিন্দ জেলায়। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল কবিতা দালাল। তিনি মূলত ওয়েটলিফ্টিং দিয়েই তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের সূচনা করেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ১২তম সাউথ এশিয়ান গেমস-এ নারী ওয়েটলিফ্টিং-এর ৭৫ কেজি ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জয়ী এই নারী, সেই বছরই দ্য গ্রেট খালির তত্ত¡াবধানে ‘হার্ড কেডি’ নামে পেশাদার রেসলিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। শুরুতে বছরখানেক কন্টিনেন্টাল রেসলিং ফেডারেশন-এর মঞ্চে নিজের কুস্তি দক্ষতার প্রমাণ দেন। এর পরের বছর, ২০১৭ সালে Mae Young Classic টুর্নামেন্টের জন্য মনোনীত হলেও প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে যান। একই বছরের অক্টোবরে WWE-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ২০১৮ থেকে WWE পারফরম্যান্স সেন্টারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন। এর পর থেকে নিয়মিতভাবে Wrestle Mania Women’s Battle Royal এবং NXT লাইভের মতো বড়ো আসরগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তিনি ইনজুরির জন্য রিংয়ের বাইরে থাকলেও এখনো ডডঊ-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন।


সৌরভ গুরজার

প্রাক্তন জাতীয় কিক-বক্সিং স্বর্ণপদক জয়ী ভারতীয় রেসলার সৌরভ গুরজার ; রেসলিং রিংয়ে ‘ডেডলি ডান্ডা’ নামেও পরিচিত। ভারতীয় রেসলিং সংগঠন Total Nonstop Action Wrestling টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে পেশাদার রেসলার জীবনের শুরু করেন ২০১১ সালে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে WWE-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে WWE পারফরম্যান্স সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন এবং একই বছর ফ্লোরিডার ওরলান্ডোতে অনুষ্ঠিত NXT লাইভ ইভেন্টের মাধ্যমে WWE-তে অভিষিক্ত হন। ২০২০ সাল থেকে তিনি আরেক ভারতীয় রেসলার রিংকু সিং-এর সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘ইন্দাস শের’ নামে ট্যাগ টিম গঠন করেন ; যা এখনো সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তাঁর সম্পর্কে আরেকটি তথ্য না দিলেই নয়...! ২০১৯ সালে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নামে একটি বলিউড মুভিতে প্রথমবারের মতো খল চরিত্রে অভিনয় করেন, যা ২০২১ এ রিলিজ হবে বলে ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি আরও দুটি ভারতীয় টিভি সিরিজেও অভিনয় করেছেন।


দ্য সিং ব্রাদার্স

গুর্ভ সেহ্রাÑ রিং নেম সুনীল সিং এবং হার্ভ সেহ্রা ওরফে সমীর সিং বিশ্বজোড়া রেসলিং ভক্তদের কাছে দ্য সিং ব্রাদার্স এবং দ্য বলিউড বয়েজ নামেই বেশি পরিচিত। ২০০৫-২০০৬ এর দিকে এককভাবে নিজেদের ক্যারিয়ার শুরু করলেও দুই ভাই একত্রে WWE-এর মূল মঞ্চে অভিষিক্ত হন ২০১৬ সালে। এখন পর্যন্ত তাঁরা WWE-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন। ২০১৭ সালের WWE চ্যাম্পিয়নশিপ-এর মঞ্চে জিনদার মহলের সাইডকিক হিসেবে তাঁকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনেও এই দুই ভাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৯ পর্যন্ত তারা জিনদার মহলের ম্যানেজার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে তারা ২০৫ লাইভ আর ডডঊ ২৪/৭ চ্যাম্পিয়নশিপ-এ ফিরে আসেন। এখনো পর্যন্ত দুইভাই মিলে ৯ বার WWE ২৪/৭ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ছাড়াও, RKK Tag Team Championship Ges Global Force Wrestling Tag Team Championship এর মতো বড়ো আসরগুলোতে নিজেদের প্রমাণ করেছেন এই রেসলার ভাতৃদ্বয়।


রিংকু সিং রাজপুত

২০০৮ সালে টিভি রিয়েলিটি শো ‘দ্য মিলিয়ন ডলার আর্মস’-এ প্রথম হওয়া এই ভারতীয় রেসলারের শৈশব কাটে উত্তর প্রদেশের ভাদোহী এলাকায় অত্যন্ত দরিদ্রতার মধ্যে। এই টিভি শো-এর কল্যাণেই সারাদেশের প্রায় ৩৭ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে তিনি অর্জন করেন প্রথম ভারতীয় হিসেবে আমেরিকান পেশাদার বেসবল লিগে অন্তর্ভুক্তির বিরল সম্মাননা। পরবর্তী সাত বছর ‘পিটসবার্গ পাইরেট’-সহ বেশ কিছু মাইনর লিগের হয়ে বেসবল কোর্ট মাতিয়েছেন তিনি। এরপর হঠাৎই জীবনের বাঁক বদলে পেশাদার রেসলার হিসেবে ২০১৮ সালে WWE-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং একাধিক NXT লাইভে অংশগ্রহণ করেন। ২০২০ এর মার্চে ভারতীয় রেসলার সৌরভ গুরজার এবং ম্যানেজার ম্যালকম বিভেন্স-এর সঙ্গে জোট বেঁধে গঠন করেন ট্যাগ টিম ‘ইন্দাস শের’।

তাঁর জীবনের নাটকীয় কাহিনি নিয়ে ২০১৪ সালে ক্রেইগ গিলেস্পির পরিচালনায় নির্মিত হয় সিনেমা ‘মিলিয়ন ডলার আর্ম’; যা প্রযোজনা করে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স।

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন