সংবাদ উপস্থাপনার চেয়ে সংবাদকর্মী হওয়া বেশি গুরুত্বের -সজল মিত্র রিচার্ড

20 Jun 2022, 03:54 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
সংবাদ উপস্থাপনার চেয়ে সংবাদকর্মী হওয়া বেশি গুরুত্বের -সজল মিত্র রিচার্ড

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন সময় টিভির জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক সজল মিত্র রিচার্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপককে নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


সজল মিত্র রিচার্ড ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অক্টোবর রেডিও টুডেতে যোগদান করেন। এরপর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর প্রতিবেদক হিসেবে সময় টেলিভিশনে যোগ দেন। ছেলেবেলা থেকেই কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে নিজেকে সবসময়ই আপডেট রাখার একটা প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিল তার। বিশেষ করে ক্রীড়া ক্ষেত্রে। আর সেই ইচ্ছেটা পূরণ করতে হলে কোনো-না-কোনো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করতে হবে। সেটা ভেবেই বেতারে কাজ শুরু করেছিলেন আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগে। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে করতে গণমাধ্যমে কাজের প্রতি ভালোবাসা প্রচণ্ড বেড়ে যায় তার। একসময় বেসরকারি চ্যানেল সময় টেলিভিশনে কাজের সুযোগ পেয়ে যান তিনি। তারপর থেকেই স্বপ্নগুলো আরো ডানা মেলতে থাকে। সংবাদ উপস্থাপনার যাত্রা শুরু এমনই ছিল সজল মিত্র রিচার্ডের।
সংবাদ উপস্থাপক হতে চান বা হবেন এরকম কোনো ইচ্ছে ছেলেবেলা অথবা বড়ো হয়েও কখনো ছিল না তার। এখনো যে আছে, এরকমও নয়। অর্থাৎ সজল মিত্র একজন ভালোমানের সংবাদকর্মী হতে চেয়েছিলেন। গণমাধ্যম শব্দটার সঙ্গে কোন বয়স থেকে পরিচয় সেটা মনে নেই তার। তবে, এটা বলতে পারেন, যে বয়স থেকে এই শব্দটি সম্পর্কে তিনি জেনেছেন তখন থেকেই সংবাদকর্মী পেশার ওপর নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সজল মিত্র।
প্রথম সংবাদ পাঠ নিয়ে সবাই একটু এক্সাইটেড থাকে। সজল মিত্রও তার ব্যতিক্রম নন। প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সজল মিত্র বলেন, প্রথম সংবাদ পাঠ ছিল একটি প্রাইভেট রেডিও স্টেশনে। সেখানে প্রতিঘণ্টায় নিউজ আপডেট হেডলাইনের মতো করে পড়তে হতো আমাকে। আমি ওই স্টেশনে একজন আরজে [রেডিও জকি] হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। আরজেরা সাধারণত অনুষ্ঠান বিভাগের অধীনে কাজ করে। আমরা সবাই জানি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা এবং সংবাদ উপস্থাপনা দুটোই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আমাকে প্রতিঘণ্টার নিউজ আপডেট পড়তে হবে এবং অনুষ্ঠান উপস্থাপনার টেম্পো থেকে বের হয়ে নিজের কণ্ঠে নিউজের টেম্পো আনতে হবে। এজন্য একটু চাপ তো ছিলই। এসিতে ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও রীতিমতো ঘামছিলাম আমি। ছেলেবেলায় বিতর্ক চর্চা করতাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক চর্চার সুবিধাটা এখানে কাজে লেগেছিল। যে-কারণে কোনো কিছু চিন্তা না করেই বিতার্কিক সত্তার অনুপ্রেরণা নিয়ে পড়ে ফেললাম। বুঝলাম হরবরে করে হলেও শুরুটা ভালোই ছিল।
একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য যেসব গুণ থাকা দরকার তার সবগুলোই আছে সজল মিত্রের। শুধু তার বেলায় নয়, যারা সংবাদ উপস্থাপক হতে চায় তাদেরও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, কে কতটুকু জেনে নিজের ভেতরে প্রয়োগ করে সবকিছু আত্মস্থ করতে পারেন এবং কাজের জায়গায় প্রয়োগ করতে পারবেন, তারাই সবার আগে নিজেকে একজন ভালো সংবাদকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। সংবাদ উপস্থাপনার বিষয়টি আসলে অনেকগুলো মানুষের পরিশ্রমী কাজের সমন্বয়। সেখানে একজন রিপোর্টার, ভিডিও জার্নালিস্ট, ভিডিও এডিটর, নিউজ এডিটর সবার অবদান থাকে। এরা সবাই সংবাদকর্মী। সংবাদ উপস্থাপক হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন সংবাদ উপস্থাপকও তাই ভালো মানের সংবাদকর্মী হলে পুরো বুলেটিনটাই গণমানুষের কাছে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে।
সংবাদ উপস্থাপনার জন্য আলাদা কোনো প্রশিক্ষণ নেননি রিচার্ড। তিনি বলেন, আগে থেকেই বিতার্কিক ছিলাম তাই হয়তো সংবাদ উপস্থাপনা করতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। সজল মিত্র রিচার্ড সংবাদ উপস্থাপনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কনস্যুমার মার্কেটিং বিভাগে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো সেরকম ভাবার সময় আসেনি। তবে এটা ঠিক, আমি সংবাদ উপস্থাপনার চেয়ে সংবাদকর্মী হওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, ভবিষ্যতেও দেব। কেউ যদি এই পেশায় আসতে চায় তাদেরও একই কথা বলবো। আবারো বলি, একজন সংবাদকর্মীর নিউজ সেন্স সংবাদ উপস্থাপকের নিউজ সেন্সের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
অবসরে গান শুনতে খুব ভালো লাগে। আর বেড়াতে ভালো লাগে যেকোনো নদী পরিবেষ্টিত গ্রাম। যেখানে চোখের দৃষ্টিতে এবং মনে একটা ভিন্ন রকমের প্রশান্তি এনে দেয়। প্রিয় রং নীল, আর প্রিয় পোশাক সাদাকালো। প্রিয় খাবার ভাত, ডাল, আলুভর্তা সঙ্গে ডিম ভাজি।