চলে গেলেন সাংবাদিক তোয়াব খান

02 Oct 2022, 04:17 PM শ্রদ্ধাঞ্জলি শেয়ার:
চলে গেলেন সাংবাদিক তোয়াব খান

একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান সম্পাদক তোয়াব খান মারা গেছেন [ইন্নালিল্লাহি ...... রাজিউন]। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই ১ অক্টোবর ২০২২, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তোয়াব খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তা জানিয়েছেন।

এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, “তোয়াব খান ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ। তার মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যম জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।”

প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। স্বাধীনতার পর তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদক, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক এবং দৈনিক জনকণ্ঠসহ গণমাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশপ্রেম এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সংগ্রামী এ গুণী সাংবাদিক তার স্বীয় কর্মের মাধ্যমে আজীবন হয়ে স্মরণীয় থাকবেন।”

তোয়াব খানের ছোট ভাই ওবায়দুল কবীর বাচ্চু জানিয়েছেন, রোববার তার ভাতিজি তানিয়া খান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলে সোমবার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সোমবার সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে দৈনিক বাংলার কার্যালয়ে প্রথম জানাজা, দেড়টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা, বিকালে গুলশান আজাদ মসজিদে তৃতীয় জানাজার পর বনানী কবরাস্থানে দাফন করা হবে তোয়াব খানকে।

এরমধ্যে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

তোয়াব খান ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। তিনি প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের [পিআইবি] মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।

রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেছিলেন তোয়াব খান। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবও ছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক পাওয়া তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল, সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে। তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে।

এরপর ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে যোগদান করেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। স্বাধীনতার পরে দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দৈনিক জনকণ্ঠের শুরু থেকে উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সবশেষে তিনি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল আলম প্রবীণ সাংবাদিক তোয়াব খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।