টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি ও আকর্ষণীয় চেহারা এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন চ্যানেল ২৪-এর সাবিহা নিগার দৃষ্টি তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপকের বিস্তারিত আনন্দভুবনের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো...
২০০৬-এর কোনো একদিন সাবিহা নিগার দৃষ্টি’র হঠাৎ করেই মনে হলো পড়াশোনা শেষে কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। তবে সংবাদ উপস্থাপনার বিষয়ে আগে থেকেই একটু একটু আগ্রহ জন্ম নিয়েছিল তার মনে। তার বাবার পছন্দের প্রফেশনও ছিল এটা। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একদিন পত্রিকায় চোখ পড়ে জবস এ-ওয়ান অর্গানাইজেশনে নিউজ প্রেজেন্টেশনের কোর্স করানোর একটি সংবাদের দিকে। অবশ্য সেটা সম্পর্কে আগে থেকে কোনো ধারণা ছিল না তার। পত্রিকার সংবাদটা দেখা মাত্রই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে ভর্তি হয়ে যান দু’মাসের একটি কোর্সে। কোর্স করতে করতেই কয়েকটা জায়গায় সিভি [জীবনবৃত্তান্ত] জমা দেন। প্রথমেই এনটিভি থেকে ফোন আসে এবং সেখানেই যোগদান করেন। এনটিভিতে নিউজের ড্রাইরান করতে করতে সিএসবি নিউজ থেকে অফার আসে এবং সিএসবি নিউজে যোগদান করেন। সিএসবি নিউজেই তার ক্যারিয়ার শুরু। এনটিভিতে যোগদান না করে সিএসবি নিউজে যোগদান করেন তার বাসা কাছে হওয়ার কারণে। সিএসবি নিউজে ছিলেন ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত। তারপর পলিটিক্যাল কারণে সিএসবি নিউজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮-এ একুশে টিভিতে যোগদান করেন। একুশে টিভিতে কাজ করতে করতে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক দিনে যোগদান করেন চ্যানেল ২৪-এ। চ্যানেল ২৪-এর আনুষ্ঠানিক সম্প্রচারের প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করেন এবং সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে এখনও কাজ করছেন।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার ইচ্ছেটা কি ছেলেবেলা থেকেই ছিল ? ‘ছেলেবেলায় সংবাদ উপস্থাপনাটা আসলে সেভাবে বুঝতাম না। টিভিতে অনেকের খবর পড়া দেখতাম। যাদের উপস্থাপনা ভালো লাগত তাদের উপস্থাপনা দেখে সংবাদ উপস্থাপনা কী সেটা জানা। তখন থেকেই একটা ইন্টারেস্ট গ্রো করেছিল যে আমি চাইলেই এটা হতে পারব কি না, সংবাদ উপস্থাপনায় আমি আসতে পারবো কি না। সেক্ষেত্রে আমার পরিবার আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম, ডিবেটিং করতাম, যেটা আমাকে বেশ সাহায্য করেছে। আসলে সংবাদ উপস্থাপক প্রফেশন শখ থেকে আর এখন প্যাশন যেটাই বলেন না কেন, ওটাই হয়ে গেছে আর কি।’
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার ব্যাপারে পরিবার থেকে বলতে গেলে বাবা-মা-বোনের সহযোগিতা বেশি পেয়েছেন। তারপর যখন সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করেন তখন সবার সাপোর্ট পেয়েছেন তিনি। স্পেশালি তার মার কাছ থেকে। তিনি যেভাবে দরকার সেভাবেই প্রতিনিয়ত তাকে সহযোগিতা করে গেছেন। তার বাবা এখন বেঁচে নেই, যখন বেঁচে ছিলেন সবসময় সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। ইনফ্যাক্ট তার ফ্যামিলি, বন্ধুবান্ধব, নিউজের কলিগ, তাছাড়া তিনি একজন ব্যাংকার তাই ব্যাংকের কলিগরাও তাকে নিউজের জন্য উৎসাহ দেন, খুব পছন্দ করেন। সবাই খুবই ইন্সপায়ার করেন।
প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি ২০০৬-এ প্রথম যখন সংবাদ পাঠ করার জন্য সেটে উঠবো তখন আমার হাত-পা কাঁপছিল। তখনকার অবস্থার অভিজ্ঞতা আমি এখন বলে বোঝাতে পারবো না। সেদিন অন্যরকম একটা ভালো লাগা, ভয়, আতঙ্ক, এক্সাইটমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে আমি উপস্থাপনাটা শুরু করলাম। ভালোভাবেই আমি সেদিন শেষ করতে পেরেছিলাম।’ একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন ? কোন জিনিসগুলো জানা প্রয়োজনÑ ‘ভালো সংবাদ উপস্থাপনা বলতে কিছু নেই তবে সংবাদ উপস্থাপনা একটা ভালো কাজ। সংবাদ উপস্থাপনা করার জন্য যে যোগ্যতা থাকতে হবে সেটা হচ্ছে সংবাদ বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। আমি যে খবর পড়ছি সেটা সম্পর্কে আমার জ্ঞান কতটুকু আছে, সে সম্পর্কে আমি কতটুকু জানি ওটাই হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি। আর আমি কী ডেলিভারি দিচ্ছি ওটা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
সাবিহা নিগার দৃষ্টি ২০০৬-এ জবস এ-ওয়ান থেকে সংবাদ উপস্থাপনার জন্য একটা কোর্স করার পর যখন সিএসবি নিউজ-এ যোগদান করেন তখন তার টিমের সবাইকে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যেমন, বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, এনডিটিভি, ইএসপিএন, আসতক এমনকি মিডিয়া গুরুর অর্গানাইজেশন থেকেও প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে।
এখন যারা নতুন আসছে তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আসলে নতুনদের পড়াশোনা ঠিকমতো করে, সংবাদ সম্পর্কে জেনে, সংবাদ উপস্থাপনাকে ভালোবেসে তার পরেই সংবাদ উপস্থাপনা পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।
সাক্ষাৎকার : শহিদুল ইসলাম এমেলু