বয়েস ৪০ পেরিয়ে গেলেও সৌন্দর্যে যেন চিড় ধরাতে পারেনি, বরং দিনদিন সৌন্দর্যের আলোয় আরো আলোকিত হচ্ছেন, শুধু রূপেই নয়, দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অভিনয়েও, বলছি বহু গুণে গুণান্বিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী রুনা খানের কথা। অভিনয়শিল্পী হিসেবে রুনা খান সবসময় নতুন নতুন চরিত্রের জন্য নিরন্তর ছুটে চলেন। ব্যতিক্রমী গল্প তাকে টানে সবসময়। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
এই সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী রুনা খান। কাজের পরিধি কমিয়ে দিলেও, বছরে যে দুয়েকটি কাজ করছেন, সেই কাজগুলো প্রশংসা কুড়াচ্ছে। রুনা খান মূলত টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নেন। একটা সময় ছিল টেলিভিশন খুললেই দেখা যেত তাকে, তবে এখন আর গদবাঁধা কাজে নিজেকে জড়াতে চান না তিনি। বছরে একটি হলেও সেই কাজটি হবে তার মনের মতো, আর এই জন্যই পর্দায় এখন তাকে কম দেখা যাচ্ছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব ছিলেন রুনা খান। কিন্তু কয়েক মাস ধরে কোথাও দেখা যায়নি এই অভিনেত্রীকে।
এই প্রসঙ্গে রুনা খান বলেন, ভালো কাজের জন্য আমি আজীবন অপেক্ষা করতে রাজি। বছরে একটি কাজ করতে চাই সে কাজটি হবে দর্শক নন্দিত। এখন এমন চরিত্র পাননি তিনি। যা দিয়ে অভিনয়ের তৃষ্ণা মিটে। সেই চরিত্রে জন্য আজীবন অপেক্ষা করতে রাজি তিনি।
একটা সময় সাহসী লুকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে ভক্তদের চমকে দিতেন। কিন্তু হঠাৎ আড়ালে চলে যান রুনা। সম্প্রতি ফেসবুকে নিজেকে ব্যতিক্রমী লুকে ধরা দিলেন অভিনেত্রী। সেখানে স্পষ্ট ফুটে উঠল তার বয়সের ছাপ। সঙ্গে চুল ছোটো করে ফেলেছেন ! জানালেন, নিজের চুল নাকি নিজেই কাটেন ; তাও আবার বঁটি দিয়ে ! শিক্ষাজীবনে হল থেকে পাওয়া পুরনো অভ্যাস বদলাতে পারলেন না। তাই তো নিজের চুল নিজে কেটে হল জীবনের স্মৃতিচারণ করলেন। কিন্তু রুনা মনে করেন, এদেশে নারীরা নিজের ইচ্ছামতো কোনো কাজই করতে পারে না। ওই পোস্টে রুনা লেখেন, ‘এই বঙ্গদেশে বেশিরভাগ নারী, নিজের যখন যা ইচ্ছা করে তা করতে পারে না, আমিও পারি না।’
অভিনেত্রী রুনা খান ছোটোপর্দার পাশাপাশি বড়োপর্দায় অভিনয় করেও বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। নির্মাতা তৌকির আহমেদের পরিচালনায় ‘হালদা’ সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
সিনেমার পাশাপাশি ওয়েবফিল্মে কাজ করেও নতুনভাবে এসেছেন আলোচনায়। অভিনয়ের প্রয়োজনে নিজের ওজন কমিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার অভিনীত দু’টি ছবি রয়েছে মুক্তির মিছিলেÑ মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘বক’ কৌশিক শংকর দাস পরিচালিত ‘দাফন’। দু’টি সিনেমারই গল্প জীবনঘনিষ্ঠ। পাশাপাশি চলতি বছরেই রুনা খান শেষ করেছেন শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় ‘শোধ’ ওয়েবফিল্মটি।
রুনা খান ‘হালদা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ‘ছিটকিনি’ [২০১৭] ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। ‘ছিটকিনি’ ছবিতে তার কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর জন্য মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়াও ওয়েব সিরিজ ‘বোধ’-এ অভিনয়ের জন্য ‘ময়ূরপঙ্খী স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’-এ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আহত পাখির গান টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের জন্য একঘণ্টার নাটক ও টেলিফিল্মে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী [প্রধান চরিত্র] বিভাগে আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
তার প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘কষ্টনীড়’ হইচইয়ে মুক্তি পায়। আর সে ওয়েব ফিল্মের জন্য ‘ডেইলি স্টারের’ সেরা অভিনয়শিল্পীর নমিনেশন পান তিনি। এছাড়াও আলোচনায় ছিলেন আশফাক নিপুনের ওয়েব ফিল্ম ‘কষ্টনীড়’, গৌতম কৈরির ওয়েবফিল্ম ‘আন্তঃনগর’, আবু হায়াত মাহমুদের ওয়েবফিল্ম ‘মার্ডার ৯০’, কাজল আরেফিন অমির ওয়েবফিল্ম ‘অসময়’।
রুনা খান ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কাটে টাঙ্গাইলের সখিপুর শহরে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা আসেন। তার পিতা ফরহাদ খান ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। মা আনোয়ারা খান। তার স্বামীর নাম এষণ ওয়াহিদ। তাদের একমাত্র কন্যার নাম রাজেশ্বরী। রুনা খান টাঙ্গাইলের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ঢাকার বদরুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ইডেন কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে কর্মী হিসেবে যোগ দেন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে অভিনয়জীবন শুরু করেন। ছোটোদের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’-এ সুমনা চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। কাজ করেছেন সিনেমা, ওয়েবফিল্ম ও বিজ্ঞাপনচিত্রে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের নাম গোত্রহীন মঞ্চনাটকের মঞ্চায়নে তিনি অপি করিমের স্থলাভিষিক্ত হন। এছাড়া তিনি আসাদুজ্জামান নূর নির্দেশিত নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। অভিনয় করেন সারা যাকেরের নির্দেশনায় ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ নাটকে।
রুনা খান হুমায়ুন ফরীদি নির্দেশিত ‘ছায়াবিথী’, গোলাম সোহরাব দোদুল নির্দেশিত ‘মামাভাগ্নে’, ‘সংসার’, ‘সাতকাহন’, আলভী আহমেদ নির্দেশিত ‘আড্ডা’, দিপংকর দীপনের ‘মায়ের দোয়া পরিবহণ’, সোহেল আরমান নির্দেশিত ‘জলরং’, মাতিয়া বানু শুকু নির্দেশিত ‘একটা কিনলে একটা ফ্রি’, মাসুদ সেজানের ‘লংমাচর্’, আবু হায়াৎ মাহমুদ নির্দেশিত ‘বৃষ্টিদের বাড়ি’, রায়হান খানের ‘প্রেসিডেন্ট সিরাজ-উদ-দৌলা’, মাহফুজ আহমেদের ‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে’, ‘মাগো তোমার জন্য’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিকগুলোয় অভিনয় করে প্রশংসি হন। তার অভিনীত সবশেষ ধারাবাহিক নাটক ফ্যামিলি ক্রাইসিসি তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
তার উল্লেখযোগ্য একক নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘দেয়াল আলমারী’, ‘অভিনেতা’, ‘দ্য বস’, ‘বাফার জোন’, ‘বোধ’, ‘স্বর্ণমানব’, ‘বড়ো মেয়াদে’, ‘যদিও সন্ধ্যা’, ‘পথের প্রান্তে, ‘বহিরাগত’, ‘বৌভাগ’, ‘বাবার ঘর’, ‘মাটিবর্তী’, ‘খোঁড়া ঘোড়া’, ‘বাহাদুর ডাক্তার’, ‘টিনের চশমা’, ‘অবাক যোগসূত্র’ প্রভৃতি।
এছাড়া তিনি গ্রামীণফোন, ডাচবাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, রাঁধুনী এবং বিএসআরএম স্টিল-এর বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন।
ছবি : চিশতী আল মারুফ