‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’ ২০১৯ চ্যাম্পিয়ন সংগীতশিল্পী পাখি বাউলিয়ানা এরই মধ্যে তার সুরেলা কণ্ঠমাধুর্য দিয়ে বহু দর্শক-শ্রোতার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। স্কুলজীবন থেকেই তিনি গান গেয়ে আসছেন। তার রয়েছে পঞ্চাশটির কাছাকাছি মৌলিক গান। এবারের সারেগারে আয়োজনে পাখি বাউলিয়ানাকে নিয়ে লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...
বর্তমানে পাখি বাউলিয়ানা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন স্টেজ শো, টিভি লাইভ এবং নতুন মৌলিক গানের রেকর্ডিং নিয়ে। সম্প্রতি গীতিকার ও সুরকার যাযাবর পলাশের কথা ও সুরে নতুন একটি গানে কণ্ঠ দিলেন পাখি বাউলিয়ানা। গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন এ এইচ তূর্য। ফোক ঘরানার এই গানটি উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া সুরের আদলে সৃষ্ট। গানের কথা ও সুর সাজানো হয়েছে গ্রামবাংলার আবহে। গ্লোবাল প্লাস অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে গানটি প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এই গানটি খুব শিগ্গিরই মিউজিক ভিডিও আকারে গ্লোবাল প্লাসের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হবে। এছাড়া বেশ কিছু নতুন গানের কাজ শেষ করেছেন এবং কিছু গান ইতোমধ্যেই প্রকাশও পেয়েছে।
গানের শুরুটা যেভাবে
মাত্র ছয় বছর বয়সে পাখির সংগীতযাত্রা শুরু। একদিন খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তিনি পাশের স্কুলে একটি গানের অনুষ্ঠান দেখেন। সেখানে অংশ নিয়ে প্রথমবার গান পরিবেশন করেন। সেখানে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ দুলাল চন্দ্র, শ্যামল চন্দ্র, নারায়ণ চন্দ্র ও বাদশা আলম তার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন। তারা অনুষ্ঠান শেষে পাখির বাবাকে বলেন, ‘ওকে গান শেখালে একদিন বড়ো শিল্পী হবে।’ তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাবা তাকে গানের স্কুলে ভর্তি করে দেন।
এরপর থেকেই পাখির সংগীতের ভুবনে পথচলা শুরু। বর্তমানে তার সংগীত-জীবনের বয়স প্রায় ১৭ বছর। ছেলেবেলায় তিনি তিনবার জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেছেন। এছাড়া ভারতের ‘ম্যাংগো ফেস্টিভাল’-এ একাধিকবার গান গেয়েছেন।
তার পরিবারে অন্য কেউ সংগীতের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও, বাবার উৎসাহই তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তবে, এখন তার স্বামী আল-আমিন হোসেন একজন মিউজিশিয়ান ; কিবোর্ড বাজান। বলা যায়, পুরো পরিবারে তারা দু’জন সংগীতের সঙ্গে জড়িত।
সংগীত নিয়ে পড়াশোনা ও স্বপ্ন
পাখি বাউলিয়ানা বর্তমানে সরকারি সংগীত কলেজে লোকসংগীত বিভাগে অনার্সে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তার স্বপ্ন আগামীদিনেও সংগীত নিয়ে কাজ করা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের সংগীত শেখার সুযোগ করে দেওয়া। তিনি বলেন, “অনেকেই আছে যারা গান শিখতে চায় কিন্তু শেখার সুযোগ পায় না। আমি চাই তাদের জন্য ‘গুরুগৃহ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে, [গুরুগৃহ মানে গুরুদের বাড়িতে যে গান শেখার আয়োজন করা হয়] যেখানে তারা বিনামূল্যে গান শিখতে পারবে।”
কোন গান গাইতে পছন্দ
পাখি সব ধরনের গান গাইতে ভালোবাসেন, তবে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন লোকসংগীত, বিচ্ছেদি গান, লালন, মুর্শিদি ও মাটির গান গাইতে। তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু গান নিয়ে পড়াশোনা করছি, তাই আধুনিক, রবীন্দ্র, নজরুলের গানও গাইতে হয়। তবে, মাটির গান গাইতেই সবচেয়ে ভালো লাগে।’

ম্যাজিক বাউলিয়ানা-২০১৯-এর স্মৃতি
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পাখি ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। সেই মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি সবসময়ই ভালো, খুবই আনন্দের। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি ভাষায় বোঝানো যায় না। আমি রংপুর অঞ্চলের মানুষ। তাই রংপুর বিভাগ থেকেই আমার কম্পিটিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন একবুক আশা নিয়েই আসলে পা রেখেছিলাম। আমি চ্যাম্পিয়ন হব এতটুকু ভাবতে পারিনি। পরে যখন সত্যি সত্যি চ্যাম্পিয়ন হলাম তখনকার অনুভূতি আসলে অন্যরকম ছিল। আমার পরিবার, ওস্তাদ, এলাকাবাসী- সবার আনন্দই ছিল আমার সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি।”
সংগীত দর্শন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পাখি বাউলিয়ানার গানের শুরু হয়েছিল বাউল গান দিয়ে। ছোটোবেলায় বাউলের অর্থ না বুঝলেও পরে উপলব্ধি করেন, বাউলরা দেহতত্ত্বের গান গায়- যা জীবনের গভীর অর্থ বহন করে। সেই সূত্র ধরেই তিনি লালন, মুর্শিদি, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গাইতে শুরু করেন।
বাউল গান এখন আর আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না- আপনার মন্তব্য কি ? “না, আমার কাছে আসলে এটা মনে হয় না। কারণ গান শ্রোতারা শুনতে ভালোবাসে। ভালো জিনিস শ্রোতারা সারাজীবন শোনে। আমার মনে হয় ভালো কথার, ভালো সুরের গান যখন শ্রোতারা পাবে তখন নিশ্চয়ই সেটা আজীবন শুনবে। ভালো গান মানুষ সবসময়ই শুনতে চায়। ভালো কথা ও ভালো সুরের গান কখনও হারায় না। এটা আমার কাছে মনে হয়।”
লেখাপড়া ও ব্যক্তিগত জীবন
পাখি বাউলিয়ানা পড়াশোনা করেছেন কাঁঠালবাড়ি জব্বার আলী প্রি-ক্যাডেট স্কুল, সেলিমনগর সুফিয়া খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং লালমনিরহাট পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় এসে ভর্তি হন সরকারি সংগীত কলেজে।
অবসরে তিনি গানের অনুশীলন, রান্না ও ঘুরতে ভালোবাসেন। মাঝে মাঝে স্বামীকে নিয়ে পুরান ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে যান। পাহাড়ও তার প্রিয়- বিশেষ করে দার্জিলিং ও সিকিম। প্রিয় রং সাদা, প্রিয় খাবার ডাল, ভর্তা-ভাজি আর চিংড়ি মাছ।